Sep 15, 2007

টোয়েন্টি-টোয়েন্টি



টোয়েন্টি-টোয়েন্টি খেলা দেখিনি এখনো। তবে বুঝতে পারছি খেলাটা জনপ্রিয় হতে যাচ্ছে। ক্রিকেট বিনোদনের আবেদন বিশ্বব্যপী করবার জন্য যা করা দরকার সেটাই করছে কর্তাব্যক্তিরা। ওভার কমানো, মাঠ ছোট সাইজ করা, আরো নানাবিধ; ভবিষ্যতে চিয়ার লিডার'রা এসে হাফটাইমে কোমর দুলুনী দিলেও খুব একটা অবাক হবো না। গতপরশু ভারত-পাকিস্তান খেলায় যেটা দেখলাম, সেটা আমাকে ভাবালো। খেলা টাই হবার পর 'বোল আউট' নামক একটা উর্বর সমাধান। নিশ্চিত ভাবেই আইসিসি'র কর্মকর্তারা ফুটবল বাদে অন্য কোন খেলা দেখেন না, সেটা বোল আউট পদ্ধতি দেখলেই বোঝা যায়। জমজমাট একটা ম্যাচের নির্বোধ এবং প্রাণহীন সমাধান হতে পারে 'বোল আউট'। আমার বিশ্বাস বাংলাদেশের আনাচে-কানাচের কিশোর ক্রিকেটার'রা 'বোল আউটে'র চেয়েও দর্শনীয় এবং দক্ষতাপূর্ণ একটা সমাধান দিতে পারবে। যেটা পারেনি আইসিসি'র মাথামোটা মার্কেটিং এক্সপার্টরা। শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। খেলা'র পণ্যমূল্য বাড়াতে গিয়ে, যেন বিনোদন মূল্য হারিয়ে না যায় সেদিকে তারা লক্ষ্য রাখবেন আশা করি।

Aug 29, 2007

আমাদের রোমযাত্রা কি তবে শুরু হলো ?

সব রাস্তাই ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে এক পর্যায়ে রোম অভিমুখী হয়। কথাটা নিদারূণ সত্য বলে মনে হচ্ছে, সম সাময়িক ঘটনাপ্রবাহে। নাশকতামূলক ষড়যন্ত্র, অপশক্তি, দূরভিসন্ধি নানাবিধ অভিধা এখন সেনাপ্রধান এবং উপদেষ্টাদের কথায়। আগের সরকারগুলোর অভিযোগের ক্ষেত্রে দেখেছি, সরকারীদল খুব প্রত্যাশিতভাবেই বিরোধীদলকে দায়ী করে থাকে নাশকতামূলক কাজে লিপ্ত বলে। একই সাথে প্রধানদুটি দলের সাথে দুটো প্রতিবেশী দেশের ইন্ধন'ও উঠে আসে সরকারী প্রেসনোটে। এসব নাশকতা ছিলো বিরোধী দলের ছাত্রনেতা কিম্বা কোন নেতাকে ঢিট করবার প্রয়োজনীয় হাতিয়ার। বর্তমানে দৃশ্য পুরোপুরি বদলে গেছে। যুগে যুগে সারা পৃথিবীতেই সেনাসরকার রাজনীতি বিরোধী। এখন রাজনীতিবিদ কিম্বা রাজনীতি যেটাই বলুন, রাজনৈতিক আবহকেই অপশক্তি বলে চিত্রায়িত করবার চেষ্টা করছে বর্তমান সরকার* (*সেনাসমর্থিত সরকার)।

সরকার বলছে, অপশক্তি চাইছে জনগণের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে দাঁড়া করাতে এবং প্রেসব্রিফিংয়ে বলছে রাজনীতিবিদরাই হচ্ছে এই অপশক্তি। তাহলে বিষয়টা কোথায় দাঁড়ায়। সরকার রাজনীতিকে জনগণের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। ডানে-বামে কান্নি মেরে রাস্তা আবার ঠিক রোমে পৌঁছোচ্ছে। জেনারেল পারভেজ মোশাররফ ক্ষমতায় আসবার পর পাকিস্তানের ব্যাংকগুলোতে ঋণখেলাপীরা লাইনে দাঁড়িয়ে হুড়োহুড়ি করে ঋণ শোধ করেছিলো। নেওয়াজ শরীফ আজীবন নির্বাসিত হলেন, এবং বেনজীর ভুট্টো দূর্নীতির দায়ে ওয়ারেন্ট এড়াতে প্রবাসী। আমাদের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের নেত্রীও, ঠিক এমন দশা হওয়ার মুখে ছিলেন। এখানে লক্ষ্যনীয় যে, পুরো রাজনৈতিক হিসেব-নিকেশ কে একপাশে রেখে দুজন স্কেপগোট তৈরির প্রথা, দু-দেশেই সমানভাবে বিরাজমান। তার মানে কী ? অন্য রাজনীতিবিদ যারা জেলের বাইরে আছেন, যারা সংস্কারের কথা বলছেন তারা অপরাধ করেননি ?


অপশক্তি'র প্রশ্নে আবার আসি। অপশক্তি কে বা কারা ? সংবাদ মাধ্যমের ভাষ্য অনুযায়ী এই পৌনে এক লক্ষ লোক অপশক্তি । এরমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমবেশী সব ছাত্র-ছাত্রীই অপশক্তি, কারণ বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল ঢাবি থেকে। একটা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১০০ জনে ১ জন, কিম্বা ১০ জনে ১ জন ভিন্নমত পোষন করলে সেটাকে আমরা ভিন্নমত বলতে পারি। সরকার পক্ষ বলবে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী কিম্বা অপশক্তি। কিন্তু দেশের প্রতীক একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমস্ত ছাত্র-ছাত্রী-শিক্ষক-অভিভাবক এবং দেশের অসংখ্য মানুষ যখন একই মত পোষন করে; তখন সেটা সরকারে পছন্দনীয় না হতে পারে কিন্তু সেটা একটা মত এবং সেটাই দেশের প্রতিনিধিত্বকারী মত।

Aug 23, 2007

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার নিন্দা জানাই

সাদা-কালো ব্লগে গানটা শুনলাম খুব ভাল লেগেছে তাই ভাবলাম যত বেশী সংখ্যক শোনাতে পারি ততো ভালো।

Lives in the Balance - Jackson Browne

Ive been waiting for something to happen
For a week or a month or a year
With the blood in the ink of the headlines
And the sound of the crowd in my ear
You might ask what it takes to remember
When you know that you've seen it before
Where a government lies to a people
And a country is drifting to war

And theres a shadow on the faces
Of the men who send the guns
To the wars that are fought in places
Where their business interest runs

On the radio talk shows and the t.v.
You hear one thing again and again
How the u.s.a. stands for freedom
And we come to the aid of a friend
But who are the ones that we call our friends--
These governments killing their own?
Or the people who finally cant take any more
And they pick up a gun or a brick or a stone
There are lives in the balance
There are people under fire
There are children at the cannons
And there is blood on the wire

Theres a shadow on the faces
Of the men who fan the flames
Of the wars that are fought in places
Where we cant even say the names

They sell us the president the same way
They sell us our clothes and our cars
They sell us every thing from youth to religion
The same time they sell us our wars
I want to know who the men in the shadows are
I want to hear somebody asking them why
They can be counted on to tell us who our enemies are
But they're never the ones to fight or to die
And there are lives in the balance
There are people under fire
There are children at the cannons
And there is blood on the wire

ভিডিওটা দেখলে, আরো ভালো লাগবে।

* ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক-সাংবাদিক নিপীড়নের প্রতিবাদ জানাই।

Jul 23, 2007

২৩ শে জুলাই, ২০০৭

লেখালেখি পুরোমাত্রায় বন্ধ। এটার কি কারণ হতে পারে। ব্যস্ততা বললে ভুল হবে। ব্যস্ত আমরা সবসময়ই থাকি। কিন্তু এখন যে সময় যাচ্ছে সেটাকে বলতে পারি, সময়ের পূর্ণ ব্যবহার। জেগে থাকা প্রতিটি মুহূর্তে কিছু করছি। এই কাজ করবার ক্লান্তি যেমন আছে, তেমনি আছে ভাল লাগা বোধ। নিজেকে পূর্ণোদ্যমে খরচ করবার তৃপ্তিই আলাদা। এই সময়গুলোতে নিজের ক্ষমতা, সামর্থ্যে এবং স্বপ্নের সাথে পরিচয় হয়। যা হোক এসব বলে জল ঘোলা করে আর কাজ নেই।

এখন থেকে প্রতিদিন, অন্তত এক পাতা লিখব ঠিক করেছি।

Jun 11, 2007

ভূমিধ্বসের ভূমিকা





শেষ খবর পর্যন্ত মারা গিয়েছে ৮৬(এখন ১০৬) জন। এরকম দুই এবং তিন ডিজিটের গণমৃত্যু আমাদের দেশে নতুন না। তবুও খারাপ লাগে। শুধু বৃষ্টির জলেই মানুষ ভেসে যায় এখনো এই দেশে।

চট্টগ্রামে যে জায়গাগুলোয় দূর্ঘটনা হয়েছে তারমধ্যে কয়েকটা আমার বেশ পরিচিত। কুসুমবাগ/ডেবার পাড়/গরীবউল্লাহ্‌ শাহ্‌র মাজারের ওখানে ভূমিধ্বসের একমেবাদ্বিতীয়ম কারণ হচ্ছে অবৈধভাবে পাহাড় কাটা। যারা ভূমি আইন নিয়ে কিছু জানেন তারা হয়তো জেনে থাকবেন পাহাড়ে কোন দাগ চলে না। আরএস, পিএস কোন কিছু না। যার দখলে সেই পাহাড়ের মালিক। এই সহজ সূত্র আর মাসলম্যান দুইয়ের মিলনে চট্টগ্রাম বেরাছেড়া। কুসুমবাগের ঐ পাহাড়গুলোর বেশীরভাগেরই মালিক ইস্পাহানী। ওদের ভূ-সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করবার সামর্থ্যে কমবার সাথে সাথে গত বিশ বছরে আগত সব কমিশনার, এলাকার মস্তান, প্রভাবশালী লোকজন যে যার মত কেটেছে পাহাড়।

পাহাড় কেটে কিভাবে জমি বের করা হয় সেটা কেউ দেখেছেন কিনা জানি না। সাধারণত করা হয় কি পাহাড়ের যে কোন একটা ঢালু পাদদেশে হঠাৎ একদিন সকালে দেখবেন একটা ঝুপড়ি মতন। দু-তিনটে রিকশার একটা গ্যারেজ, চা-বিড়ি’র দোকান।

কে খুলেছে ?
এলাকার বড় ভাই।
দুদিন বাদে একটু বাঁশ-টিন দিয়ে ছোট্ট ঘের। পাহাড়ের মালিক বুঝবার আগেই ঐ ঘেরের মধ্যে চলে কোদাল চালনা। পনেরদিনের কিম্বা মাসের মধ্যে দাঁড়িয়ে গেল প্লট। পয়েন্ট টু বি নোটেড এটা এখন ফ্লাট ল্যান্ড। পাহাড়ের অংশ না। সুতরাং কেউ একটা আরসিসি পিলার গেঁথে দিয়ে দখল নিলেই সেটা তার প্লট। পাহাড়ের যেহেতু কোনো দাগ-খতিয়ান নেই, সুতরাং দাবী করার উপায় নেই এইটা এই পাহাড়ের অংশ।

এলাকার মাস্তানেরা এইভাবে প্লট তৈরি করে এবং লোকজনের কাছে বিক্রী করে। আবার সেই প্লট যারা কিনছে তারা তৎক্ষণাৎ দখল না নিলে আরেক মাস্তান সেটা দখল করবে। সুতরাং আবার নতুন ব্যবসা। প্লট উদ্ধার করে দেওয়ার ব্যবসা।

এই যে প্লট বানানো হয়, এটা পাহাড়ের কোল কেটে বা বলা যায় পাহাড়ের পায়ের কাছে খুঁচিয়ে একটু জায়গা বের করা হয়। তার মানে ঐ প্লটের পিছনে খাড়া দাঁড়িয়ে থাকে পাহাড়। এভাবেই পাহাড় খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে প্লট যত বাড়ানো হয়, পেছনের খাড়া দেয়াল তত খাড়া হতে থাকে।

কুসুমবাগের পাহাড়(টিলা বলাই শ্রেয়) মূলত বালিমাটির। চট্টগ্রামে সব পাহাড়ের মাটিতে বালির ভাগ বেশী। এই বালির পরিমাণ ৭০ শতাংশের বেশীই হবে আমার অনুমানে। ফলে একটু মুষলধারে বৃষ্টি হলেই পাহাড় থেকে ঝরে পড়তে থাকে বালি। এই বালি যায় ড্রেনে। ড্রেন বন্ধ করে দেয় নিমিষের মধ্যেই। ফলে জল্যাবদ্ধতা। এই জলাবদ্ধতা যতখানি ড্রেনেজ সিস্টেমের দূর্বলতার জন্য ততখানিই পাহাড়ের ঢাল কেটে ফেলার, কারণে আগত বালির জন্য।

এই পাহাড়ধ্বসে মৃত্যু অনেক পুরোনো ঘটনা। নতুন কিছু নেই এতে। তারপরেও আজ খারাপ লাগলো। ভাবলাম আমি কি বড় বেশী আঞ্চলিকতায় ভুগি। অন্য একটা দেশে থেকে আজ দেশের জন্য উদাস হয় মন, আরেকদিন খারাপ হয় দূরের একটা শহরের জন্য। দেশে থাকলে হয়তো কোন বন্ধুর বাসায়, কিম্বা আর্ট কলেজের সামনে কোন এক বন্ধুর সাথে তুমুল তর্ক-আলোচনায় মেতে উঠতাম কেন হয় এরকম, কি করা উচিত এসব নিয়ে। আস্তে আস্তে ফিকে হয়ে যেত মন খারাপের মেঘ। রাতে বাসায় খেয়ে দিতাম একটা ঘুম। এখন একদলা প্যাঁপ্যাঁচে মনখারাপ নিয়ে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড খুলে বসি।

এই লেখার শেষে এসেও ভাবছিলাম এরকম ‘বন্ধু তুমি রঙ্গুম গেলা’ টাইপ ম্যাদারুস আবেগের কিছু আর লিখব না। এগুলো সম্ভবত না বলা কথা, শব্দের আকার নিচ্ছে।

May 5, 2007

শুভ জন্মদিন



ব্যস্ত একটা দিন পার করলাম গতকাল। একে শুক্রবার, সপ্তাহের শেষ দিন। তার উপর সেমিস্টার শেষের দিন বলা যায়। সকালে পরীক্ষা দিলাম। কি দিলাম শুধু আমি জানি, আমার পেন্সিল জানে। পরীক্ষার জন্য পড়তে হবে এই মানসিকতা একদম গেছে আমার। পড়াই হয় না। তাও দিয়ে এসেছি। অবশ্য প্রজেক্ট প্রেজেন্টেশান খুব ভাল হয়েছে। সুতরাং এ যাত্রা রক্ষা। পরীক্ষার পর যথারীতি বিস্কিট দিয়ে লাঞ্চ করে মসজিদে গিয়েছি। এসে রবার্ট কে নিয়ে এগযসট লাইন নতুন করে বানালাম। ওকে অনেক আগেই মসলাদার খাবার খাওয়াবো বলেছিলাম। আর ওদিকে প্রদীপ্ত এন্ড গং’ রা আমার মিক্সড ভেজিটেবল এর প্রশংসা শুনে বসে আছে খাবার জন্য। তাই ওদের সবাইকে রাতে আমার বাসায় খাওয়ার নিমন্ত্রণ করেছিলাম।

জন্মদিন বিষয়টা কখনোই সেই অর্থে নোটেবল কিছু ছিল না আমার কাছে। কখনো উৎসব করে পালন করিনি। কলেজ ভর্তি হবার পর থেকে বন্ধুরা জন্মদিনে শুভেচ্ছা দিত এইটুকুই। গতবছর জন্মদিনের দিন রুমমেটকে Yesterday রেস্টুরেন্টে খাইয়েছিলাম। বেচারা গত চারদিন আগে জানতে পারলো সেটা ছিল আমার জন্মদিন। খুব আফসোস করছে এখন।

সকালে পরীক্ষার মাঝখানে কল পেলাম শামীমা আক্তার (সম্ভবত। নাম ভুল হলে শামী কাবাব বানাবে আমাকে) সাকী’র। অনেকদিন কল করিনি, কল করলে আমার ত্যাঁদড় হেডফোন এর কারণে কথা ওদিকে শোনা যায় না। এই সব নিয়ে সে দেখলাম বোমা হয়ে আছে। ফোন ধরার পর ‘শুভ জন্মদিন’ বলতে যতক্ষণ লাগে তাই রক্ষা। এরপর শুরু হলো ঝাড়ি। বাপস। আরে দোস্তলোগ এত অল্পে ক্ষেপলে কি চলে ? এখন এই বাবদ আরো মাস ছয়েক যখনই কথা হবে আশা করছি ছোট ছোট কিস্তিতে ঝাড়াঝাড়ি করবে।

নিমন্ত্রণ তো করলাম কিন্তু রক্ষা কে করবে। এগযসট লাইনের কাজ শেষ করে ওয়ালমার্ট, সেখান থেকে বাজার করে বাসায় আসতে আসতে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা। দাওয়াত যখন আমরা খেতে যাই, আমরা জানিও না এর পেছনে কি কর্মযজ্ঞ ছিল। গতকাল সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। মিক্সড ভেজি এবং চিকেন ভূনা দুটো আইটেম। আমার চুলোয় একটা মাত্র বড় হিটার, বাকী তিনটা ছোট। ফলে একটা একটা আইটেম রান্না করতে হবে। বড় ননস্টিক আছে মাত্র একটা যেটাতে রান্না করতে কমফোর্ট ফিল করি। ফাও পাওয়া গেঞ্জাম হলো ফ্রোজেন চিকেন। বরফ যুগের তিনটে বরফ খন্ড। সালদ করতে গিয়ে দেখি শসা নেই। গাড়ীতে আমার ব্যাগে যে শসা, জুকিনি আছে ভুলেই গেছি। একটা অভিজ্ঞতা বটে। তবে নিমন্ত্রণ বেশ সফল হয়েছে।

তবে যেটা সাধারণত হয়, ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙ্গে। সুতরাং আমার বাসা কোন ছার। আমরা সাতজন একত্র হবার পর গণিত এবং যন্ত্রপরিগণক বাদে, বাকীরা কিছুক্ষণ কোর্স, রিসার্চ, ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে গেঁজানো। এরপর সবাই মিলে যার যার এডভাইজরের শুক্রবাসরীয় গীবত করলাম। আস্তে আস্তে টপিকস সুইচ করলো মার্কিন রাজনীতি, পলিসি, সোভিয়েত, তৃতীয় বিশ্ব কি নেই।


৫’ই মে, ২০০৭

ওয়েস্ট কলাম্বিয়া।

Apr 27, 2007

কালো ভবঘুরে



শৈশবে আমাদের পাড়ায় এক ভবঘুরে দেখতাম। আমাদের পাড়ার বাসিন্দা সে ছিলোনা, তবে ঘুরে ঘুরে কিছুদিন পর পর আসতো। নির্দিষ্ট কিছু বাড়ী ছিলো যেগুলোর ছায়ার সে জ্যেষ্ঠ মাসের কড়া রোদে বিশ্রাম নিত। বেশ লম্বা, কালো পেটানো শরীর। পিঠে বিশাল এক বোঝার কারণে খুব ঝুঁকে থাকত। দেখে মনে হত দুঃখ ভারাক্রান্ত যোদ্ধা। চোখ দুটো ছিল শিশুর সারল্য। প্রায়শই ওর আস-পাশ ঘুরতাম, আগ্রহ অনুভব করতাম মানুষটার প্রতি। লোকটার কাঁধে এত বড় বোঝা কেন ? বিচিত্র এক বোঝা, কোল্ড ড্রিংকস এর খালি প্লাস্টিক এর বোতল থেকে, লাল-নীল রংয়ের কাপড়ের টুকরো, পলিথিন, ছেঁড়া জুতো। খুব সাধারণ সব বস্তুর সমাহার। নিজের চেয়েও বড় সেই বোঝা বহন করছে, পিঠ কুঁজো করে। ওর কথা শুনবার একটা অদম্য ইচ্ছে ছিল, কিন্তু শোনা হয়নি। এখনো জানিনা সে কী কথা বলতে পারে না? না কি সে কথা বলতো না। আমার ধারনা সে কথা বলতে পারে, কিন্তু সে বলতো না। নিজের মাঝে এক বিশাল সমুদ্রে, সে একা এক নির্জন দ্বীপে বাস করত। কখনো দেখে মনে হয়নি, এই বিশাল দালান, জীবনের নানাবিধ আয়োজন কোনো কিছুই তার নির্জনতা ভঙ্গ করছে।

কিছু কিছু শিশুসুলভ আগ্রহ আমরা সযত্নে লালন করি, দীর্ঘদিন কিংবা অনন্তকাল। আগ্রহ মিটবার সম্ভাবনা খুব কম জেনেও আমরা সেই আগ্রহ ঝেড়ে পুঁছে যত্ন করে রাখি। ওর গলার স্বর শুনবার আগ্রহ, আমার সেই রকম একটা আগ্রহ।

Apr 12, 2007

১১ই এপ্রিল, ২০০৭



কিছু পরিণতি ঠেকানো যায় না সেই চেষ্টা করিনা গাড়ীর দূর্ঘটনা পরবর্তী ৩০ সেকেন্ড যেমন হয়েছিল, ঠিক সেরকম একটা ঠেকানো-অসম্ভব পরিণতির দিকেই যাচ্ছে এখন




ছবিঃ বইয়ের প্রচ্ছদ।
Fränk Zimmer (ed.)
bang
Pure Data (1. International PD-Convention Graz)
ca. 192 pages., DVD, pb., EUR 24.–, ISBN-10: 3-936000-37-9

* Musa Ramsay, MSA.

Mar 26, 2007

বিকিয়ে যাওয়া ঈশ্বর


.

তখন ছিলাম থার্ড ইয়ারে। জীবনযাপন নিয়ে খুব বেশী ভাবিত নই। টিউশানি আছে মাসের শেষে টাকা আসবে। তিন মাস টিউশানি না করার নিশ্চয়তা ব্যাংকে রেখেছি। বেশ সুখী জীবন বলা চলে নিশ্চিতভাবেই এটাকে। খাই , ঘুমাই , ক্লাস করি। সকালে কার্জন হল দিয়ে শুরু, দুপুরে মধু , বিকালে শাহবাগ, সন্ধ্যায় টিএসসি হয়ে রাতে ঈশা খাঁ রোডে গপ্পোবাজির সীমানা।

এরকম একটা দিনে সন্ধ্যায় রুনু মুখার্জীর বংশীবাদন শুনতে যাদুঘরে ঢুকেছি, ঢুকার সময় বেশ চেক আপ হল, বুঝলাম না। অনুষ্ঠান শেষে বের হয়ে দেখি চারিদিকে একটা গুমোট ভাব। পরদিন চট্টগ্রাম যাবো, তাড়াতাড়ি ঘর মুখো হলাম। ঘর থেকে সরাসরি বাস স্টেশন।

আমার চট্টগ্রামের বাসায় খবর দেখবার বাতিক আছে। তখনো বিবিসির শাসন চলছে টিভিতে। বড়ভাই পারলে দুইচোখের একটা দিয়ে বিবিসি আর একটা দিয়ে সিএনএন দেখে। বাসায় সকালে পৌঁছেই খবরটা দেখলাম। টুইন টাওয়ার স্ম্যাশড টু গ্রাউন্ড।

এক লহমায় বিশ্বরাজনীতির নতুন পাতা শুরু হল। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। নিউইর্য়ক এর গ্রাউন্ড জিরো থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ জগন্নাথ পাঁড় পর্যন্ত পৌঁছোলো।


.

সত্তর দশকের শেষদিকে পাকিস্তান বর্ডারে করা মাদ্রাসাগুলোর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য আরো বিশ বছর বাদে
আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের মধ্য দিয়ে আমরা দেখলাম।


.

বাংলা ভাইয়ের ফাঁসি হবে। আমি খুব একটা আনন্দিত নই এই খবরটায়। ব্যক্তিগতভাবে আমি মৃত্যুদন্ডের বিরোধী। আরো ঘোর বিরোধী আমি অপরাধীর ফাঁসির মধ্য দিয়ে পাপের চিহ্ন মুছবার প্রক্রিয়ার। কারণ আমার খুব সাধারণ মস্তিষ্ক বলে, দেশের পাঁচশো জায়গায় একই সময়ে বোমা বিস্ফোরণ করানোর মত সামর্থ্যে বাংলাদেশের হাতে গোনা কয়েকটি সংগঠনের আছে। তার মধ্যে কোনো নাবালক সংগঠন নেই। কিন্তু এক নাবালকের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে, ঘাগুরা পর্দার আড়ালে ইতিমধ্যে চলে গেছে।


.

আগামী শনিবার বাংলাদেশ-ইন্ডিয়ার খেলা দেখবো। আমাদের নার্ভ টানটান হয়ে থাকবে খেলার প্রতিটি মূহুর্ত।

বউবাজার বস্তি আগুনে পুড়ে গেল। টানবাজার উচ্ছেদ হয়ে গেল সেই কবে। সোনারগাঁওয়ের বস্তিটা উন্নয়নের মডেল হিসেবে আরো কিছু কাল থাকবে।

বিশেষ বাহিনী আরো কিছু রাজনীতিবিদ ধরবেন। বছর তিনেক বাদে সামরিক-বেসামরিক, গৃহপালিত-বন্য মিলিয়ে শ-তিনেক রাজনীতিবিদের সংসদ ভবন ভর্তি থাকবে। নতুন ফাইটার জেট কিনবার জন্য তারা কাড়ি কাড়ি টাকা বরাদ্দ দেবেন।


.

আমাদের ছাপোষা জীবনে ঈশ্বর তার অসীম ক্ষমতা নিয়ে সবসময়ই থাকবেন। স্টিফেন হকিং অসীম ঘনত্বের মটর দানা সদৃশ সৃষ্টিরহস্যের কথা যতই বলুন, ঈশ্বর সপ্তর্ষীমন্ডলের চেয়ে ও বেশী উজ্জ্বলতায় আমাদের আকাশে থাকবেন।

.

এই ঈশ্বর আমার নয়,
কখনোই বোধকরি ছিলেন না
চড়া দামে বিকিয়ে যাওয়া
এই ঈশ্বরের দিকে এক দলা থুতু দিই
।।



ছবিসূত্রঃ Post Secret



দন্ডিত অপুরুষ



দন্ডিত অপুরুষ তুমি


সিগারেটের ছাই ঝাড়তে ঝাড়তে নিশ্ছিদ্র কোণে একটা দমকা হাসি দেয় সাদাত।
তীব্রতম অনুরাগও মাঝে মাঝে যাতনার; ততখানিই যাতনা , যতখানি ফুটোহীন ড্রামের।
কল্পনা করো শুভ্রা, একটা ফুটোহীন ড্রাম যে চাইছে সব উপুড় করে ফেলে দিতে, কিন্তু পারছে না। কারণ তার কোন ফুটো নেই। উগরে দেওয়ার সমস্ত বাসনা নিয়ে নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকা ছাড়া তেমন কিছু করবার নেই।

ভালবাসা যখন চারদেয়াল হয়ে যায়
দেয়ালের ভেতরের মানুষগুলো আমি, তুমি, নন্দিনী,শুভংকর
আমরা সবাই একটা ফুটোবিহীন ড্রামে পরিণত হই।
আমাদের মধ্যকার দুরত্ব যখন আণবিক হয়ে যায়
তখন বিকর্ষণ ও থাকে, আকর্ষণের সাথে ;

খুব ক্লিশে শোনায়, তাই না শুভ্রা।

অনেকবার চেষ্টা করেও যেটা পারেনি, আজ সেটা সফল হবে আশা করাটা বোকামী। তবুও চেষ্টা করল সাদাত ধোঁয়ার রিং তৈরি করতে। নাম না জানা এক দেশের মানচিত্র হয়ে গেল ধোঁয়ারা।

সিগারেটের ধোঁয়া কখনোই ভালো লাগে না শুভ্রার, অসহ্য ও লাগে না। অনেকটা মাঝামাঝি ব্যাপার। গ্যালিলিও চার ডিগ্রি কোণে দুলে ওঠা পেন্ডুলামের মত। কিন্তু সিগারেট শেষ হয়ে যাওয়ার পর যে গন্ধটা লেগে থাকে ওর শরীরে সেটায় নেশা হয় শুভ্রার। এটা কেউ জানে না।


হঠাৎ সম্বিৎ ফিরে পায়। রাজ্যের বিরক্তি এসে ভর করে, মেজাজ অষ্টমে চড়বার সব ব্যবস্থা করছে সাদাত। দেরী হয়ে যাচ্ছে ওর কোন হুঁশ নেই। ওদিকে মা বসে আছে একগাদা কাজ নিয়ে, আজ রাতে বাসায় খালা আসবে। বলতে শুরু করলে ছেলেটা আর থামেই না। এখন সম্পর্কের দূরত্ব নির্ণয় করছে, আণবিক স্কেলে। ভালবাসা না কি দেয়াল হয়ে যায়। হোক, হলেতো ভালোই। চমৎকার একটা বাড়ী করা যাবে। ভালবাসাকুঞ্জ। ওকে এখন জিজ্ঞাসা করা যায়, '' আচ্ছা, ভালবাসায় কি ছাদ হয় ? ''


বিরক্ত হবে , কিন্তু ভাব করবে হতভম্ভ হয়ে গেছে। বিরক্তিটা দেখাতে চায় না। শুভ্রা প্রায়ই এই কাজটা করে, অভ্যাসবশত অন্যমনস্ক হয়ে যায়। সাদাতের কথার মাঝখানেই এরকম দেয়াল, চারদেয়াল, ছাদ ,বাড়ী, সংসার, বাজার, কাঁথা, বালিশ সব ঘুরে এসে , হঠাৎ খেয়াল করে বাস গাবতলীতেই। স্টার্ট নেয়নি এখনো।

'' শুভ্রা ? ''

আবার সম্বিৎ ফিরে পায় শুভ্রা। হড়বড় করে বলে ওঠে, '' রিকশা ঠিক করতে হবে, দেরী হয়ে গেল। ''

সাদাত এবার আর রিং তৈরি করবার চেষ্টা করল না, একগাল ধোঁয়া এবার কোন চেষ্টার অভাবেই আরো একটা নাম না জানা দেশের মানচিত্র হয়ে চলে গেল সুদূরে।।


ছবিঃ Hand of Good, Auguste Rodin


Mar 22, 2007

টুকিটাকি

ভাবলাম শুয়ে শুয়ে একটু পড়ব। মন বলছে একটা ছবি এঁকে ফেল। এখন লিখছি। কেনো লিখি মাঝে মাঝে নিজেই বুঝি না। স্ট্রেস রিলিফের একটা কৌশল এই লেখাঝোকা। সারাদিন আজ কাজের মাঝে মাঝে কি যেন ভাবলাম। অনেকদিন কোন পাহাড়ে যাই না, সমুদ্রেও যাওয়া হয় না। কাজটা অন্যায় হচ্ছে। নিজের সাথে এবং পাহাড়-সমুদ্রের সাথে। আমার সান্নিধ্যে বঞ্চিত হচ্ছে ওরা। কাল আবার জুমা বার। হাতে একগাদা কাজ। কাল পোলো রোড পার্কে নিমন্ত্রণ। কিভাবে যেন ঝড়ের বেগে সময় পার হয়ে যাচ্ছে।

Mar 17, 2007

নতুন স্লোগানঃ এসো সব ডোরাকাটা মিলে নির্মাণ করি 'এল ডোরাডো'



আজ বাংলাদেশ যেটা করলো সেটা একটা ইতিহাস। ১৭ই মার্চ ২০০৭। এতদিন প্রেস, মিডিয়া,কমেন্টেটর সবাই বাংলাদেশ কে নিয়ে খেলতো। টিভি স্ক্রিনে বসা সেট ম্যাক্স এবং ইএসপিএন এর কমেন্টেটররা বলার কিছু খুঁজে না পেলে বাংলাদেশকে এক পশলা দেখে নিতেন। এটা অনেকটা কার্ড শাফল করবার মত একটা কাজ হয়ে গেয়েছিল তাদের। কাজ নাই তো খই ভাজ। এবার সেটার একটা দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিল আমার দেশ। বাংলাদেশ খেললো এবং খেলালো। আস্তে আস্তে খেলিয়ে খেলিয়ে বড় মাছ নৌকোয় তুললো বাংলাদেশ। সাবাশ ডোরাকাটা বাঘের দল।

টেস্ট স্ট্যাটাস পাবার পর সব দেশেই বাংলাদেশ একটা টেস্ট সিরিজ খেলেছে। হোক না তা দু টেস্টের , তবুও খেলেছে। এই যে এত অহমিকা এবং দম্ভপূর্ণ অস্ট্রেলিয়া, তারাও টেস্ট সিরিজ খেলেছে। তারা বলেছে বাংলাদেশের উন্নয়নে তারা হাত বাড়াবে, কথা রেখেছে। কিন্তু ভারত সেটা পারেনি, কারণ টাইগাররা গেলে ট্যাঁক ভারী হবে না।

একসময় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে ব্রাত্য করে রাখত ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মত দেশগুলো। এখন দক্ষিণ এশিয়াতেই আবার একটা শ্রেণী বৈষম্য চালু করেছে, অর্থনৈতিক দানব ভারত।

বোঝো এবার ল্যাঠা।

আজ থেকে দিচ্ছি নতুন স্লোগান ''এসো সব ডোরাকাটা মিলে নির্মাণ করি স্বপ্নের এল ডোরাডো ''।।

Mar 6, 2007

তিরিক্ষি মেজাজ


মাঝে মাঝে মেজাজ এত খিঁচড়ে যায়। আজ সন্ধ্যায় এসে চা বানালাম, ঝালচানাচুর। এখন লিখতে বসবার পর তালু কিছূটা ঠান্ডা হওয়া শুরু করেছে।
অসহ্য রকম মেজাজ বিগড়ে গিয়েছিল আজ। ভনিতা, প্রতারণা কিংবা ছেনালীপনা এই তিনটা একদম নিতে পারিনা। মাস ফ্লো কন্ট্রোলার একটা ফস্টিনষ্টি করছিল, সেটা একটা কারণ। কিন্তু এই মাগীর জন্য এটা নতুন কিছু না। কোলে তুলে সোহাগ করলেও দুদিন বাদে গাল ফুলিয়ে বসে থাকে, কোন কারণ ছাড়া। কিংবা কারণ এখনো আমি জানি না। তবে শুধু এটাই কারণ না, মেজাজ তিরিক্ষি হবার। আরো কিছু আছে। কেউ একজন নাটক করছে, আমি অনুভব করছি। আমার মেজাজ সেটার ফিডব্যাক দিচ্ছে। যদিও আমার চেতন মন সেরকম কোন কিছু শনাক্ত করছে না।

দেখা যাক কি হয়। এখনতো ঠান্ডা হলো অন্তত।

Mar 4, 2007

সাবাশ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

অনেকদিন পর গা ঝাড়া দিয়ে জেগে উঠেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বেশ কয়েক বছর যাবৎ তারা এই প্রক্রিয়াটা চালু করেছে কিন্তু সত্যিকার নজরে আসল এইবার। একটা বড় পেটমোটা মাছ বড়শীতে পড়বার পর। ব্রাভো চবি।

ফেল করা একজন ছাত্র দেশের সর্বোচ্চ আদালতে গিয়ে বিচারকার্য করবে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদিতে অংশগ্রহণ করবে ভাবতেই গা গুলায়। ভূল বুঝবার কোন অবকাশ নেই এখানে। একজন ছাত্রের ফেল করা নিয়ে আমার কোন উন্নাসিকতা নেই, কিন্তু ফেল করে জালিয়াতি করে পাশের সার্টিফিকেট জমা দেওয়ার বিষয়ে আমার তীব্র অনীহা আছে।

আমি এটা
ভাবতেই শিউরে উঠতাম যে এই বিচারক একদিন প্রধান বিচারপতি হবে, নাইকো'র ক্ষতিপূরণ মামলা চালাবে, এমপি'র আদালত অবমাননার মামলা চালাবে, দেশে ও জাতি নিয়ে বক্তব্য ঝাড়বে এবং লোকজন সেটা বিশ্বাস করবে। আমি ভাবি এবং আমার গায়ে কাঁটা দেয় একধরণের শীতল অনুভূতি।

আমাদের সরকার সমর্থিত ভিসি'রা এরকম অনেক কুকর্ম
সমর্থন করেন। আমার নিজের চোখে দেখা, কিভাবে ফেলু ক্যাডার কে পাসের লিস্টে নাম তোলা হয়। কিভাবে নির্বাচন কমিশনে দলীয় ক্যাডারদের নিয়োগ দেওয়া হয়। এই নষ্ট যুগের অবসান বড় দরকার হয়ে পড়েছে।

আমার সময়ের সেরা ছাত্রদের দেখেছি সরকারী চাকরীতে কি তীব্র অনীহা। কেউ বেতন ভাতার কারণে, কেউ মামা নেই ঢুকতে পারবে না বলে, কেউ অবচেতন আরোপিত ঘুষ নিতে হবে বলে। অথচ এরকম হওয়ার কথা ছিল না। দেশের সেরা ছাত্ররা দেশের সেরা জায়গায় যাওয়ার তীব্র প্রতিদন্দ্বীতা করবে এরকম হবার কথা। অথচ হয়নি। দেশের প্রতিটি নির্বাচিত সরকার দলীয় দালালদের দিয়ে প্রশাসনের দলীয়করণ করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার জন্য দলীয় তকমা, ধর্মীয় তকমা, সর্বোপরি মেধাহীন তকমাটা প্রধান হয়ে গিয়েছে। গত দশ বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়জন নন-জামাত তকমার ছাত্র শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে সেটা পরিসংখ্যানের বিষয়; বোধকরি বাংলাদেশের জন্মহারের চেয়েও কম হবে এই সংখ্যা।

আমার খুব ইচ্ছা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়জন
নন-মুসলিম নিয়োগ পেয়েছে সেটা জানতে। এই সংখ্যা আমাদেরকে একটা রেসিস্ট জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য যথেষ্ট হবে বলে মনে হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে দেখি এক ধরণের পরিবারতন্ত্র জেঁকে বসছে। অমুক স্যারের ছেলে, ভাতিজা এখন শিক্ষক। এই পরিস্থিতি বেশ কয়েকটা ডিপার্টমেন্টে। একটা পরিবারেই সব মেধা কি সঞ্চিত হতে পারে? এ আমার কাছে এক বিস্ময়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে ঝেড়ে কাশবার দরকার এখন। সরকারী কর্ম কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যানদের কাঠগড়ায় দাঁড়া করানোর দরকার। এভাবে চলতে পারেনা একটা দেশ, একটা শিক্ষা ব্যবস্থা।

Mar 2, 2007

কুকুর কাহিনীঃ দে দৌড়


পেন্নাম, হিমুর কুত্তা সমাচার পড়ে কুকুর নিয়া, এক পশলা লিখতে ইচ্ছা হল।

লোকে কুত্তার বাচ্চা গালিটা কেন দেয় বুঝা দুষ্কর।আমার কুকুর অভিজ্ঞতা বড়ই সুখকর। নিজে কখনো কুকুর পুষি নাই। গুল মোহাম্মদ যে কারণে পোষে না সে কারণে। তবে কুকুর প্রানীটা বরাবরই ভালো লাগে।

ক.

জন্মের পর থেকেই বিষয়টা এরকম ছিল তা না। আমার বয়স তখন ৬, দেখতে একই রকম আমার ভাইয়ের বয়স ৭.৫। নানা বাড়ীতে, কাঁঠাল গাছের পিছনে, খড়ের গাদায় উঁকি-ঝুঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছি। কুকুরী চারটা বাচ্চা দিয়েছে। বিপুল আগ্রহের পরিসমাপ্তি ঘটল যখন মা কুকুর গা ঝাড়া দিয়ে উটকো আনন্দে ট্যাক্স বসিয়ে দিল। আমি আমার স্বভাব সুলভ ফিচকেমি দিয়ে পার, বদ্দা একাই ট্যাক্স পে করল দুইজনের। অথচ সামনে ছিলাম আমি, কামড়টা আমার খাওয়ার কথা।

খ.

এরপরের আরেকটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা, তখন পড়ি ক্লাস সেভেন কি এইটে। পহেলা বৈশাখের বিকেল, ডি. সি হিল জুড়ে চলছে ছবি আঁকা কম্পিটিশন।

তার একটু আগেই বুইজ্জার গিরা (বুড়া মানুষের জয়েন্ট) নামক একটা মাঠে গিয়েছি আমি আর আমার দোস্ত তানসেন। ও সেতার না বাজালেও বারান্দার গ্রিল ধরে ঝুলে '' র্পূব দিগন্তে র্সূয উঠেছে'' ধরনের অনুপ্রেরনাদায়ক গান গাওয়ায় পারর্দশী ছিল।

বুইজ্জার গিরা আসলে পারসোনাল প্রর্পাটি। আমরা খবর পেয়েছি ওখানে খুব ভাল মরিচের চারা পাওয়া যাবে। যেই কথা সেই কাজ, স্লোপ বেয়ে নেমে গেলাম। ঘুরে দেখছি এই সময় হঠাৎ, আগ্রাসী তৎপরতা নিয়ে হাজির একটা কুকুর। জীবনে এই একবারই আমি কুকুর দেখে ভয় পেয়েছি। দে ছুট, ১০০ মিটারে রের্কড করছি দুই বন্ধু কম্পিটিশন দিয়ে। গেটের কাছে এসে, দুইজন দুই দিকে চলে গেলাম, কুকুর বেচারা বিভ্রান্ত হয়ে আর ধাওয়া করলো না।

গ.

বাদবাকী প্রত্যেক বারই যেখানে যে কুকুরের পাশ দিয়ে হেঁটে গেছি, কোনো এক অজানা কারণে আমাকে পছন্দ করে ফেলে কুকুর গুলো। পিছু নেওয়া শুরু করে। কে জানে আমার মধ্যে ওরা গুল মোহাম্মদের প্রতিভা দেখতে পায় কি না?

বড়ই বিচিত্র প্রানী।

Feb 28, 2007

২৮ শে ফেব্রুয়ারী


জীবন রীতিমতো এলেমেলো হয়ে যাচ্ছে।
আজব সময়ে ঘুমোই, জাগি আরো আজব সময়ে
মার্চ এর দু তারিখের পর যদি কিছু হয় কি ?

হঠাৎ করে কবিতা সব আমাকে ছেড়ে চলে গেছে
এমন সময়ে তাঁর ছেড়ে যাওয়া কি শোভা পায়।।

Feb 26, 2007

হুমায়ুন আজাদের সাথে কিছুক্ষণ




কুৎসিত এক বিবমিষা বোধ করি মাঝে মাঝে। সব কিছু থেকেই উঠে যায় মন। আমরা এক বিচিত্র ধরনের সমাজিক জীব। নিজের পছন্দ- অপছন্দ সব কিছু নিয়ে জড়াজড়ি করে বাস করতে হয়। উপায় নেই, গোলাম হোসেন। সমাজের গোলাম হলে এরকম হবেই।
হুমায়ুন আজাদ কি এরকম বোধ করতেন ? আমি জানি না। তবে আমি এটুকু বুঝতে পেরেছিলাম যে উনি সাধারন মানুষ না।

হত্যা প্রচেষ্টা থেকে ফিরে, সুস্থ হয়ে আসার পর আমি উনার বাসায় গিয়েছিলাম। আমি, ফ্রন্টের রায়হান ভাই, অমি। দরজা খুলে দিয়েছিল মৌলি। অমি তার স্টোরির অংশ হিসেবে স্যারের ছবি তুলবে। আমি, রায়হান ভাই স্যারের সাথে কথা বলে উনাকে স্বভাবিক রাখবো। আমার নিজের ছবি তোলার ব্যাপারে কেনো শখ নেই, সেটার জন্য আজ আফসোস হয়, স্যারের পাশে বসে একটা ছবি ও তুলিনি।

মানুষ হিসেবে তার অনন্যতা এখানেই যে উনি নিজের ফিরিস্তি করেননি। এতবড় একটা আঘাত শুধু তার চোয়াল বাঁকা করে দিয়েছে । তার মন হয়ে গিয়েছিল দ্বিগুণ উদ্যমী। নিজের স্বাস্থ্যের কথা অল্প কথায় শেষ করে খবর নেওয়া শুরু করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। আমরা কিভাবে আন্দোলন করেছি, কে কে পুলিশী র্নিযাতনের শিকার হয়েছে। স্যার অসুস্থ থাকা অবস্থায় উনার সন্তানরা দৈনিক পত্রিকা এবং অন্যান্য মিলিয়ে ৫০০০ এর ও বেশী পেইজ কালেক্ট করে রেখেছে। বিভিন্ন মানুষ এসে ঐ ঘটনা নিয়ে যেখানে যত লিখা হয়েছে সব দিয়ে গেছে। অবিশ্বাস্য ব্যাপার হচ্ছে উনি সেগুলো পড়া শুরু করে দিয়েছেন। একটা বই লিখবেন। নামট া আপনারা সবাই জানেন । আমাকে বলেছিলেন, তোমরা যে যা করেছ, যা যা দেখেছ, এই ঘটনা এবং তার পরর্বতী আন্দোলন, র্কাজন হলে পুলিশের হামলা; তোমাদের সব অনুভূতি একটা সাদা কাগজে লিখে আমাকে দাও। সবচেয়ে ভাল হয়, একটা ক্যাসেটে তোমরা কথা রের্কড করে দাও, কারন সবাই লিখে প্রকাশ করতে পারেনা। বলার মধ্যে যে আবেগ আর অনুভূতি থাকে সেটা লিখায় প্রকাশ সম্ভব না। তোমাদের যে খরচ হবে সেটা আমি দিয়ে দিব। তুমি পরিচিত সবাইকে বল, তোমারা আমার জন্য যা করেছ, যে ভালবাসা দেখিয়েছ সেটার জন্য আমি অভিভূত। আমি ভাবতেও পারিনি, আমার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা পুলিশের মার খাবে। লিপন ভাই পুলিশ কাস্টডিতে মার খাচ্ছে শুনে খুব কষ্ট পেলেন। তোমরা আমার জন্য আরেকটু কষ্ট কর, তোমাদের কথা রের্কড করে আমাকে দাও।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা প্রসঙ্গে সাহস করে শিক্ষক সমিতি র্কতৃক উনাকে নিয়ে ঘটা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যার্বতন প্রোগ্রামটার কথা পেড়ে ফেললাম। তীব্র বিরক্ত উনি প্রোগ্রামটা নিয়ে ।শিক্ষক সমিতি জিনিসটাকে উনি এই জীবনে কখনোই পছন্দ করতে পারেননি।

তীব্র বিবমিষা বোধ করি, যখন দেখি শস্যহীন, ভূমিহীন,শাপলা-শালুক হীন জীবন । আম সেমাই হীন ঈদ, প্রতিমা হীন পূজো , শীৎকার হীন মিলন আর ভূমিহীন সংস্কৃতি। মনে হয় যেন বন্দুকের মুখে অ্যার্পাটমেন্টে উঠিয়ে দিতে চাইছে ।

হুমায়ুন আজাদের কয়টা প্রবচন দিয়ে শেষ করি , (স্মৃতি থেকে দিচ্ছি, হুবহু হবে না )

'' সংসদ হচ্ছে তিনশ শুয়োরের খোয়াঁড়। ''

'' টিভিতে এরোপ্লেন র্মাকা আলকাতরার বিজ্ঞাপনে বলা হয় গাড়ির বডি, বাড়ির ছাদ , নৌকা সব জায়গায় আলকাতরা লাগান। আমি বলি সবচেয়ে আগে টিভি স্ক্রিনে লাগান।''

হুমায়ুন আজাদ আপনি যেখানেই থাকুন আমাদের জন্য র্প্রাথনা করুন। বাচ্চা শুয়োর যেমন বাপের পাছায় কামড় দিয়ে, নতুন গজানো দাঁত পরীক্ষা করে, আমরা যেন সেরকম না হই।

=======================================

চৌঠা জুন, ২০০৬
রাত ২:৫০
কলাম্বিয়া।



Feb 22, 2007

রেঁনোয়ার নারী'রা



শীত বিদায় বোধহয় নিচ্ছে শেষ পর্যন্ত। আজকের দিনটা বেশ ঊষ্ণ ছিল। সকালে রোদটা তাতানো হলেও, দিন যতই গড়িয়েছে মেদুল হাওয়া বাড়ছিলো। বাসায় যখন আসছিলাম, দেখি নীল আকাশ আর হুহু হাওয়া। এটা ঠিক বৃষ্টির আগমনী বার্তার মত ছিলো না। নরম এবং আদ্র হাওয়া।
ক্লাস টেনে পড়বার সময় আহসানউল্লাহ্‌ স্যারের কাছে পড়বার পর সদরঘাটে কর্ণফুলী'র পাড়ে যেতাম ঠিক সেই সময়টার কথা মনে হচ্ছিল। আরো বেশী করে সামঞ্জ্যস্য পাচ্ছিলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে'র সময়গুলোর সাথে। অনেকদিন পর কলাম্বিয়াকে নিজের মনে হলো, খুব নিবিড় এবং
সান্নিধ্যঘন হাওয়ারা লুকোচুরি খেলছে সময় এবং স্মৃতি'র একটা ম্যাট্রিক্সে। আমার সবচেয়ে প্রিয় ঋতু এসে গেল বলে। এই বসন্ত ক্ষণস্থায়ী কিন্তু প্রচ্ছন্ন একটা প্রভাব কি রেখে যাবে আমার জীবনে।

ইচ্ছে করে এই হাওয়াদের নিয়ে নকশা বুনি
শব্দের পসরা দিয়ে নাই বা পারি
মৃদু মন্দ ইশারা, আর কপোতাক্ষ চাউনি
হাত বুলিয়ে দিই, রেঁনোয়া'র তুলিতে আঁকা বায়বীয় শরীরে

আমাদের মাগধী রমনী কখনো রেঁনোয়া দেখেছেন কিনা আমি জানি না। দেখলে কিভাবে বায়বীয় অবয়ব দিতেন খুব দেখতে ইচ্ছা হয়।

Feb 9, 2007

মুক্তধারা এবং বইমেলা-১


একুশের বইমেলা নিয়ে উচ্ছসিত ছিলাম কলেজ লাইফে। ভীষণ আনন্দিত এবং উদ্বেলিত থাকতাম সময়টায়। পরে পরে সেই উচ্ছাস আর ছিল না। শেষ কয়েক বছর বইমেলায় যাওয়া হয়েছে অনেকটা অভ্যেসের বশে। একটা বইমেলা আমাকে ভীষণ আনন্দ দিয়েছিল এবং সেই আনন্দ আমি আজও অনুভব করি। মুক্তধারা বাংলাদেশের বড় বড় জেলা শহরগুলোতে বইমেলার আয়োজন করতো। সেই বইমেলার দুই স্টলের মাঝে করিডোরে হাঁটার ছন্দ আমি এখনও ভুলতে পারিনা। শিশু-কিশোরদের জন্য এত বই বের করতেন চিত্তদা যেটা এখনকারও কোন পাবলিশার এর জন্য কল্পনা। মুক্তধারাকে বাঁচানোর জন্য কেউ এগিয়ে আসলো না। প্রিয়জন হারানোর একটা অনুভূতি হয় যখন ভাবি মুক্তধারা আর আগের মত বই বের করে না, বইমেলা করে না।

সেই মাগ্যির যুগে যখন একটা টিনটিন আশি টাকা, তখন ক্যাপ্টেন কুক (রঙ্গিন ছবি সহ) কিনেছি আঠারো টাকায়। এখন ভাবলে নিজের চোখে এক হাভাতে টোকাইয়ের চেহারা ভেসে উঠে যে দুই হাত উপচে পড়ার পরও নিতে চায়। বাংলাদেশে একমাত্র মুক্তধারাই কম দামে রঙ্গীন ছবি সহ এরকম চমৎকার সব বই দিত। ধরণের বই অবশ্য ভারতে বেশ অনেক পাবলিশার দেয়। যায় যায় দিন, মানবজমিন কিংবা রসে ভরা টাংকি পত্রিকার জন্য বিনিয়োগকারীর অভাব হয়না, কিন্তু শিশুদের এক টুকরো স্বপ্ন পূরণের জন্য বিনিয়োগকারীর অভাব হয়। বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্স হয়, ফার্মগেটে স্টিলের মাছ হয়, এম পি' দের ভর্তুকি দেয়া গাড়ী হয় কিন্তু মুক্তধারা, অগণিত অন্ধকার গলির মত বুজে যায়।

অনেকেই বলে এবং আমি নিজেও মাঝে মাঝে ভাবি আমি বোধ হয় স্বপ্ন দেখি, কিংবা অতি বাস্তবতার ঘেরে আটকে পড়া চিংড়ি আমি। কিন্তু আমার ভীষণ কষ্ট হয় মুক্তধারার
জন্য। আমার ভীষণ কষ্ট হয় এখনকার শিশুদের জন্য। তারা জানলো না কিভাবে রেডইন্ডিয়ান হত্যা হয়েছিল আমেরিকান মেইনল্যান্ডে, ক্যাপ্টেন কুকের কথা জানলো না, জানলো না তিতুমীরের বাঁশের কেল্লার কথা।

ভীষণ ব্যক্তিগত একটা পরাজয়ের মত মনে হয় আমার এই বিষয়টাকে।

একুশের বইমেলায় ১৯ ৯৮ এর পর যাওয়ার আগ্রহ পেতাম না, নির্দিষ্ট কয়েকটা স্টল ঘুরেই খালাস। বড় বেশী রকমের আলপটকা রোমান্সের বইয়ে মেলা ভর্তি থাকতো। বেশীরভাগ স্টলের মুখব্যাদান থাকতো হুমায়নে, ইমদাদুল হক মিলন, জাফর ইকবালে। অন্য সব লেখকের বই স্টলগুলোতে এবং পুরো বইমেলা জুড়ে এমনভাবে থাকতো যেন বইগুলো খুব লজ্জিত। হুমায়ুনের বইমেলায় ঠেলেঠুলে জায়গা করেছে, কৃপাধন্য তারা একটু খানি শ্বাস নিতে পেরে। মনে হতো যেন হাঁসের সভায়, বক ঢুকে পড়েছে। একটা বিবমিষা বোধ থেকে আগ্রহ হারিয়েছিলাম।

(
চলবে )

*
চিত্তরঞ্জন সাহা করকমলে

Feb 4, 2007

চরণামৃতঃ আমার ফেলে আসা পংক্তিমালা


কিছুদিন আগে পরিণীতা ছবিটা দেখছিলামছবিটায় একটা অংশে ছিল র্দূগা পূজা পূজার ঢাকের সাথে তাল মিলিয়ে উম্মাতাল নাচ অনেকদিন পর, অনেক অনেক দিন

একটা সময় ছিল যখন অক্টোবর মাসের কোন একটা দিন ভোরবেলা মাইকের শব্দ শুনে বেরিয়ে উঠে পড়েছি মায়ের হাত গলে খুব ভোর, মিহি বাতাস ঘাসের ধারালো প্রান্ত ধরে ছুটে চলেছে

মা র্দূগা র্দূগতিনাশিনী, এসে পড়েছেন আমাদের রোজকার ডাল-ভাত মাপের জীবনে আনন্দের ধ্বনি নিয়েআমার ক্ষণস্থায়ী বাল্যকালের ম্যাজিক রিয়েলিজম এর নাম র্দূগা পূজা

সকাল থেকে মাইকে ভক্তি সংগীত, এরপর পুরোনো বাংলা ছবির গান লতা-আশা-সন্ধ্যা' গান এতো বেশী শুনেছি এই পূজায় , আমার আর শোনার প্রয়োজন হয়নি গানগুলোসবচেয়ে বেশী সংখ্যকবার শোনা গানটা হচ্ছে , ''তুমি আমার নয়ন গো , যে নয়নে দেখি গো...'' , '' জন্মদিনে কি আর দেব তোমায় উপহার '', '' গুরুদক্ষিণা'' .......... সাথে সমসাময়িক হিন্দি ছবির হিট গান '' সাজন সাজন ও মেরে সাজন... '', '' তুমসে মিলকে এ্যায়সা লাগা তুমসে মিলকে '', '' এক দো তিন ......'' দুপুর বারটায় শুরু হতো লাইভ পূজা পাঠ দুপুরে মধ্যাহ্ণ ভোজনের বিরতি, সাথে একটু আলতো গড়াগড়ি বিছানায় বিকাল থেকে আবার শুরু গানতবে সন্ধ্যার পর গান বন্ধ ঢাক-ঢোলের বাজনা শুরু (আমি ঢাক এবং ঢোলের তফাৎ ভুলে গিয়েছি তাই দুঃখিত), সাথে খোল-করতাল

দেবীকে সামনে রেখে নাচছে সবাই, সে কী ভীষণ প্রণোদনা নাচে নাচটার মধ্যে অদৃশ্য শক্তির র্প্রাথনা যতখানি তারচেয়েও বেশী ছিল জীবনের সব তুচ্ছতার গন্ডি অতিক্রম করে নিজেকে মেলে ধরবার এক প্রবল বাসনা

শিশু আমার একটা সময় গিয়েছে একগাদা প্রশ্নে আমার দোস্ত রানা, শান্তুনু, বাপ্পা এদের মাথা খারাপ করে দিয়েছি একশো একটা প্রশ্নে দেবীর পায়ের নীচে কে? দেবীর দশ হাত কেন ? মানুষের দশ হাত হয় নাকি ? পাশে এগুলো কে ? কেন তিনি আসেন ? কিভাবে আসেন ? কেন এবার ঘোড়ায় চড়ে এলেন ? কই আমি তো দেখিনি ঘোড়া ?

নদীর স্রোতের মত কৌতুহল , একটা ঢেউ যেতে না যেতেই একটা , আবার একটা আবার একটা পরের বছ র রাত জেগে বারান্দায় দাড়িয়ে ছিলাম দেখবার জন্য এবার হাতি চড়ে আসবে দেবী নি˜্রাদেবীর কারণে হলো না দেখা

বড় হই আর বুঝতে থাকি এই দেবীর অবয়ব তার আর্দশের প্রতিফলন দশ ভূজে তিনি তার সন্তানের দেখ ভাল করেন, রক্ষা করেন , লালন করেন , সব করেন তিনি দশ দিক সামলান তিনি ধরিত্রী সমান ধরিত্রী দিয়েই বানানো দেহ আবার চলে যায় ধরণীর কোলে কি এক অপরুপ র্নিমাণকি এক অদ্বৈত চেতনা একই অঙ্গে কত রুপ মায়ের

বছর ঘুরে বছর আসেআমি দেখি , আমি শিখি , স্রোতেরা মুখ ছেড়ে , মাথায় খেলা করে কি এক অপরুপ রুপের আধার হয়ে সবার কাছে মা আসে , সবারই মা থাকে অথচ আমরা ঠিক মায়ের সর্ব কূল হেরি রুপ অবলোকনে র্ব্যথ হই

ঢাকের শব্দ অনেক বছর আর কানে আসেনা, আমার মস্তিষ্কে খেলা করে ঢাকের ˜্রমি-˜্রমি তাল একটা অব্যক্ত বেদনা অনুভব করি চকচকে আধূলি হারানো বালকের মত ক্ষত-বিক্ষ ত হৃদ য়ে অপেক্ষা করি অক্টোবর মাসের কোন এক ভোরের জন্য ঘাসের বুকে জমা শিশির আলতো পায়ে টোকা দিয়ে এগিয়ে যাব, প্যান্ডেলের বাঁশ ধরে দাড়িয়ে দেখব মায়ের সাজ সজ্জা

[আমার শৈশব এবং বাল্যকালের সবচেয়ে প্রিয় স্মৃতি এই র্দূগাপূজাঅনেক মমতায় যেকয়টা স্মৃতি এখনো স্পিরিট দিয়ে ধুয়ে মুছে রাখি সেটা এই পূজোর ঢোল যার দেখা পাইনা অনেক বছর আমার মাকে শুধু এই ভাবে ঢোল বাজিয়ে কাব্যনাট্য আর পালাগানের পালা উৎর্সগ করে বলতে চাই , আমি আনন্দিত এবং র্গবিত তাঁর সন্তান হতে পেরে এই প্রসাদ টুকু সবার সমীপে পেশ করছি সেই বাসনায় ।]

* ছবির উৎস কে কৃতজ্ঞতা।

লিখা হয়েছিলঃ ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৬ ।