কালো ভবঘুরে
শৈশবে আমাদের পাড়ায় এক ভবঘুরে দেখতাম। আমাদের পাড়ার বাসিন্দা সে ছিলোনা, তবে ঘুরে ঘুরে কিছুদিন পর পর আসতো। নির্দিষ্ট কিছু বাড়ী ছিলো যেগুলোর ছায়ার সে জ্যেষ্ঠ মাসের কড়া রোদে বিশ্রাম নিত। বেশ লম্বা, কালো পেটানো শরীর। পিঠে বিশাল এক বোঝার কারণে খুব ঝুঁকে থাকত। দেখে মনে হত দুঃখ ভারাক্রান্ত যোদ্ধা। চোখ দুটো ছিল শিশুর সারল্য। প্রায়শই ওর আস-পাশ ঘুরতাম, আগ্রহ অনুভব করতাম মানুষটার প্রতি। লোকটার কাঁধে এত বড় বোঝা কেন ? বিচিত্র এক বোঝা, কোল্ড ড্রিংক’স এর খালি প্লাস্টিক এর বোতল থেকে, লাল-নীল রংয়ের কাপড়ের টুকরো, পলিথিন, ছেঁড়া জুতো। খুব সাধারণ সব বস্তুর সমাহার। নিজের চেয়েও বড় সেই বোঝা বহন করছে, পিঠ কুঁজো করে। ওর কথা শুনবার একটা অদম্য ইচ্ছে ছিল, কিন্তু শোনা হয়নি। এখনো জানিনা সে কী কথা বলতে পারে না? না কি সে কথা বলতো না। আমার ধারনা সে কথা বলতে পারে, কিন্তু সে বলতো না। নিজের মাঝে এক বিশাল সমুদ্রে, সে একা এক নির্জন দ্বীপে বাস করত। কখনো দেখে মনে হয়নি, এই বিশাল দালান, জীবনের নানাবিধ আয়োজন কোনো কিছুই তার নির্জনতা ভঙ্গ করছে।
কিছু কিছু শিশুসুলভ আগ্রহ আমরা সযত্নে লালন করি, দীর্ঘদিন কিংবা অনন্তকাল। আগ্রহ মিটবার সম্ভাবনা খুব কম জেনেও আমরা সেই আগ্রহ ঝেড়ে পুঁছে যত্ন করে রাখি। ওর গলার স্বর শুনবার আগ্রহ, আমার সেই রকম একটা আগ্রহ।
1 comment:
অন্যরকম মুগ্ধতাবোধে আবিষ্ট থাকলাম কিছুক্ষণ ।
নিজের মাঝে লুকিয়ে থাকা ছোট্ট মিনি কে নতুন করে খুঁজে পাওয়ার অপূর্ব প্রকাশ !
Post a Comment