Mar 4, 2007

সাবাশ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

অনেকদিন পর গা ঝাড়া দিয়ে জেগে উঠেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বেশ কয়েক বছর যাবৎ তারা এই প্রক্রিয়াটা চালু করেছে কিন্তু সত্যিকার নজরে আসল এইবার। একটা বড় পেটমোটা মাছ বড়শীতে পড়বার পর। ব্রাভো চবি।

ফেল করা একজন ছাত্র দেশের সর্বোচ্চ আদালতে গিয়ে বিচারকার্য করবে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদিতে অংশগ্রহণ করবে ভাবতেই গা গুলায়। ভূল বুঝবার কোন অবকাশ নেই এখানে। একজন ছাত্রের ফেল করা নিয়ে আমার কোন উন্নাসিকতা নেই, কিন্তু ফেল করে জালিয়াতি করে পাশের সার্টিফিকেট জমা দেওয়ার বিষয়ে আমার তীব্র অনীহা আছে।

আমি এটা
ভাবতেই শিউরে উঠতাম যে এই বিচারক একদিন প্রধান বিচারপতি হবে, নাইকো'র ক্ষতিপূরণ মামলা চালাবে, এমপি'র আদালত অবমাননার মামলা চালাবে, দেশে ও জাতি নিয়ে বক্তব্য ঝাড়বে এবং লোকজন সেটা বিশ্বাস করবে। আমি ভাবি এবং আমার গায়ে কাঁটা দেয় একধরণের শীতল অনুভূতি।

আমাদের সরকার সমর্থিত ভিসি'রা এরকম অনেক কুকর্ম
সমর্থন করেন। আমার নিজের চোখে দেখা, কিভাবে ফেলু ক্যাডার কে পাসের লিস্টে নাম তোলা হয়। কিভাবে নির্বাচন কমিশনে দলীয় ক্যাডারদের নিয়োগ দেওয়া হয়। এই নষ্ট যুগের অবসান বড় দরকার হয়ে পড়েছে।

আমার সময়ের সেরা ছাত্রদের দেখেছি সরকারী চাকরীতে কি তীব্র অনীহা। কেউ বেতন ভাতার কারণে, কেউ মামা নেই ঢুকতে পারবে না বলে, কেউ অবচেতন আরোপিত ঘুষ নিতে হবে বলে। অথচ এরকম হওয়ার কথা ছিল না। দেশের সেরা ছাত্ররা দেশের সেরা জায়গায় যাওয়ার তীব্র প্রতিদন্দ্বীতা করবে এরকম হবার কথা। অথচ হয়নি। দেশের প্রতিটি নির্বাচিত সরকার দলীয় দালালদের দিয়ে প্রশাসনের দলীয়করণ করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার জন্য দলীয় তকমা, ধর্মীয় তকমা, সর্বোপরি মেধাহীন তকমাটা প্রধান হয়ে গিয়েছে। গত দশ বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়জন নন-জামাত তকমার ছাত্র শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে সেটা পরিসংখ্যানের বিষয়; বোধকরি বাংলাদেশের জন্মহারের চেয়েও কম হবে এই সংখ্যা।

আমার খুব ইচ্ছা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়জন
নন-মুসলিম নিয়োগ পেয়েছে সেটা জানতে। এই সংখ্যা আমাদেরকে একটা রেসিস্ট জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য যথেষ্ট হবে বলে মনে হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে দেখি এক ধরণের পরিবারতন্ত্র জেঁকে বসছে। অমুক স্যারের ছেলে, ভাতিজা এখন শিক্ষক। এই পরিস্থিতি বেশ কয়েকটা ডিপার্টমেন্টে। একটা পরিবারেই সব মেধা কি সঞ্চিত হতে পারে? এ আমার কাছে এক বিস্ময়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে ঝেড়ে কাশবার দরকার এখন। সরকারী কর্ম কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যানদের কাঠগড়ায় দাঁড়া করানোর দরকার। এভাবে চলতে পারেনা একটা দেশ, একটা শিক্ষা ব্যবস্থা।

No comments: