দন্ডিত অপুরুষ
দন্ডিত অপুরুষ তুমি ।
সিগারেটের ছাই ঝাড়তে ঝাড়তে নিশ্ছিদ্র কোণে একটা দমকা হাসি দেয় সাদাত।
তীব্রতম অনুরাগও মাঝে মাঝে যাতনার; ততখানিই যাতনা , যতখানি ফুটোহীন ড্রামের।
কল্পনা করো শুভ্রা, একটা ফুটোহীন ড্রাম যে চাইছে সব উপুড় করে ফেলে দিতে, কিন্তু পারছে না। কারণ তার কোন ফুটো নেই। উগরে দেওয়ার সমস্ত বাসনা নিয়ে নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকা ছাড়া তেমন কিছু করবার নেই।
ভালবাসা যখন চারদেয়াল হয়ে যায়
দেয়ালের ভেতরের মানুষগুলো আমি, তুমি, নন্দিনী,শুভংকর
আমরা সবাই একটা ফুটোবিহীন ড্রামে পরিণত হই।
আমাদের মধ্যকার দুরত্ব যখন আণবিক হয়ে যায়
তখন বিকর্ষণ ও থাকে, আকর্ষণের সাথে ;
খুব ক্লিশে শোনায়, তাই না শুভ্রা।
অনেকবার চেষ্টা করেও যেটা পারেনি, আজ সেটা সফল হবে আশা করাটা বোকামী। তবুও চেষ্টা করল সাদাত ধোঁয়ার রিং তৈরি করতে। নাম না জানা এক দেশের মানচিত্র হয়ে গেল ধোঁয়ারা।
সিগারেটের ধোঁয়া কখনোই ভালো লাগে না শুভ্রার, অসহ্য ও লাগে না। অনেকটা মাঝামাঝি ব্যাপার। গ্যালিলিও চার ডিগ্রি কোণে দুলে ওঠা পেন্ডুলামের মত। কিন্তু সিগারেট শেষ হয়ে যাওয়ার পর যে গন্ধটা লেগে থাকে ওর শরীরে সেটায় নেশা হয় শুভ্রার। এটা কেউ জানে না।
হঠাৎ সম্বিৎ ফিরে পায়। রাজ্যের বিরক্তি এসে ভর করে, মেজাজ অষ্টমে চড়বার সব ব্যবস্থা করছে সাদাত। দেরী হয়ে যাচ্ছে ওর কোন হুঁশ নেই। ওদিকে মা বসে আছে একগাদা কাজ নিয়ে, আজ রাতে বাসায় খালা আসবে। বলতে শুরু করলে ছেলেটা আর থামেই না। এখন সম্পর্কের দূরত্ব নির্ণয় করছে, আণবিক স্কেলে। ভালবাসা না কি দেয়াল হয়ে যায়। হোক, হলেতো ভালোই। চমৎকার একটা বাড়ী করা যাবে। ভালবাসাকুঞ্জ। ওকে এখন জিজ্ঞাসা করা যায়, '' আচ্ছা, ভালবাসায় কি ছাদ হয় ? ''।
বিরক্ত হবে , কিন্তু ভাব করবে হতভম্ভ হয়ে গেছে। বিরক্তিটা দেখাতে চায় না। শুভ্রা প্রায়ই এই কাজটা করে, অভ্যাসবশত অন্যমনস্ক হয়ে যায়। সাদাতের কথার মাঝখানেই এরকম দেয়াল, চারদেয়াল, ছাদ ,বাড়ী, সংসার, বাজার, কাঁথা, বালিশ সব ঘুরে এসে , হঠাৎ খেয়াল করে বাস গাবতলীতেই। স্টার্ট নেয়নি এখনো।
'' শুভ্রা ? ''
আবার সম্বিৎ ফিরে পায় শুভ্রা। হড়বড় করে বলে ওঠে, '' রিকশা ঠিক করতে হবে, দেরী হয়ে গেল। ''
সাদাত এবার আর রিং তৈরি করবার চেষ্টা করল না, একগাল ধোঁয়া এবার কোন চেষ্টার অভাবেই আরো একটা নাম না জানা দেশের মানচিত্র হয়ে চলে গেল সুদূরে।।
ছবিঃ Hand of Good, Auguste Rodin
No comments:
Post a Comment