Feb 4, 2007

চরণামৃতঃ আমার ফেলে আসা পংক্তিমালা


কিছুদিন আগে পরিণীতা ছবিটা দেখছিলামছবিটায় একটা অংশে ছিল র্দূগা পূজা পূজার ঢাকের সাথে তাল মিলিয়ে উম্মাতাল নাচ অনেকদিন পর, অনেক অনেক দিন

একটা সময় ছিল যখন অক্টোবর মাসের কোন একটা দিন ভোরবেলা মাইকের শব্দ শুনে বেরিয়ে উঠে পড়েছি মায়ের হাত গলে খুব ভোর, মিহি বাতাস ঘাসের ধারালো প্রান্ত ধরে ছুটে চলেছে

মা র্দূগা র্দূগতিনাশিনী, এসে পড়েছেন আমাদের রোজকার ডাল-ভাত মাপের জীবনে আনন্দের ধ্বনি নিয়েআমার ক্ষণস্থায়ী বাল্যকালের ম্যাজিক রিয়েলিজম এর নাম র্দূগা পূজা

সকাল থেকে মাইকে ভক্তি সংগীত, এরপর পুরোনো বাংলা ছবির গান লতা-আশা-সন্ধ্যা' গান এতো বেশী শুনেছি এই পূজায় , আমার আর শোনার প্রয়োজন হয়নি গানগুলোসবচেয়ে বেশী সংখ্যকবার শোনা গানটা হচ্ছে , ''তুমি আমার নয়ন গো , যে নয়নে দেখি গো...'' , '' জন্মদিনে কি আর দেব তোমায় উপহার '', '' গুরুদক্ষিণা'' .......... সাথে সমসাময়িক হিন্দি ছবির হিট গান '' সাজন সাজন ও মেরে সাজন... '', '' তুমসে মিলকে এ্যায়সা লাগা তুমসে মিলকে '', '' এক দো তিন ......'' দুপুর বারটায় শুরু হতো লাইভ পূজা পাঠ দুপুরে মধ্যাহ্ণ ভোজনের বিরতি, সাথে একটু আলতো গড়াগড়ি বিছানায় বিকাল থেকে আবার শুরু গানতবে সন্ধ্যার পর গান বন্ধ ঢাক-ঢোলের বাজনা শুরু (আমি ঢাক এবং ঢোলের তফাৎ ভুলে গিয়েছি তাই দুঃখিত), সাথে খোল-করতাল

দেবীকে সামনে রেখে নাচছে সবাই, সে কী ভীষণ প্রণোদনা নাচে নাচটার মধ্যে অদৃশ্য শক্তির র্প্রাথনা যতখানি তারচেয়েও বেশী ছিল জীবনের সব তুচ্ছতার গন্ডি অতিক্রম করে নিজেকে মেলে ধরবার এক প্রবল বাসনা

শিশু আমার একটা সময় গিয়েছে একগাদা প্রশ্নে আমার দোস্ত রানা, শান্তুনু, বাপ্পা এদের মাথা খারাপ করে দিয়েছি একশো একটা প্রশ্নে দেবীর পায়ের নীচে কে? দেবীর দশ হাত কেন ? মানুষের দশ হাত হয় নাকি ? পাশে এগুলো কে ? কেন তিনি আসেন ? কিভাবে আসেন ? কেন এবার ঘোড়ায় চড়ে এলেন ? কই আমি তো দেখিনি ঘোড়া ?

নদীর স্রোতের মত কৌতুহল , একটা ঢেউ যেতে না যেতেই একটা , আবার একটা আবার একটা পরের বছ র রাত জেগে বারান্দায় দাড়িয়ে ছিলাম দেখবার জন্য এবার হাতি চড়ে আসবে দেবী নি˜্রাদেবীর কারণে হলো না দেখা

বড় হই আর বুঝতে থাকি এই দেবীর অবয়ব তার আর্দশের প্রতিফলন দশ ভূজে তিনি তার সন্তানের দেখ ভাল করেন, রক্ষা করেন , লালন করেন , সব করেন তিনি দশ দিক সামলান তিনি ধরিত্রী সমান ধরিত্রী দিয়েই বানানো দেহ আবার চলে যায় ধরণীর কোলে কি এক অপরুপ র্নিমাণকি এক অদ্বৈত চেতনা একই অঙ্গে কত রুপ মায়ের

বছর ঘুরে বছর আসেআমি দেখি , আমি শিখি , স্রোতেরা মুখ ছেড়ে , মাথায় খেলা করে কি এক অপরুপ রুপের আধার হয়ে সবার কাছে মা আসে , সবারই মা থাকে অথচ আমরা ঠিক মায়ের সর্ব কূল হেরি রুপ অবলোকনে র্ব্যথ হই

ঢাকের শব্দ অনেক বছর আর কানে আসেনা, আমার মস্তিষ্কে খেলা করে ঢাকের ˜্রমি-˜্রমি তাল একটা অব্যক্ত বেদনা অনুভব করি চকচকে আধূলি হারানো বালকের মত ক্ষত-বিক্ষ ত হৃদ য়ে অপেক্ষা করি অক্টোবর মাসের কোন এক ভোরের জন্য ঘাসের বুকে জমা শিশির আলতো পায়ে টোকা দিয়ে এগিয়ে যাব, প্যান্ডেলের বাঁশ ধরে দাড়িয়ে দেখব মায়ের সাজ সজ্জা

[আমার শৈশব এবং বাল্যকালের সবচেয়ে প্রিয় স্মৃতি এই র্দূগাপূজাঅনেক মমতায় যেকয়টা স্মৃতি এখনো স্পিরিট দিয়ে ধুয়ে মুছে রাখি সেটা এই পূজোর ঢোল যার দেখা পাইনা অনেক বছর আমার মাকে শুধু এই ভাবে ঢোল বাজিয়ে কাব্যনাট্য আর পালাগানের পালা উৎর্সগ করে বলতে চাই , আমি আনন্দিত এবং র্গবিত তাঁর সন্তান হতে পেরে এই প্রসাদ টুকু সবার সমীপে পেশ করছি সেই বাসনায় ।]

* ছবির উৎস কে কৃতজ্ঞতা।

লিখা হয়েছিলঃ ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৬ ।

No comments: