Feb 26, 2007

হুমায়ুন আজাদের সাথে কিছুক্ষণ




কুৎসিত এক বিবমিষা বোধ করি মাঝে মাঝে। সব কিছু থেকেই উঠে যায় মন। আমরা এক বিচিত্র ধরনের সমাজিক জীব। নিজের পছন্দ- অপছন্দ সব কিছু নিয়ে জড়াজড়ি করে বাস করতে হয়। উপায় নেই, গোলাম হোসেন। সমাজের গোলাম হলে এরকম হবেই।
হুমায়ুন আজাদ কি এরকম বোধ করতেন ? আমি জানি না। তবে আমি এটুকু বুঝতে পেরেছিলাম যে উনি সাধারন মানুষ না।

হত্যা প্রচেষ্টা থেকে ফিরে, সুস্থ হয়ে আসার পর আমি উনার বাসায় গিয়েছিলাম। আমি, ফ্রন্টের রায়হান ভাই, অমি। দরজা খুলে দিয়েছিল মৌলি। অমি তার স্টোরির অংশ হিসেবে স্যারের ছবি তুলবে। আমি, রায়হান ভাই স্যারের সাথে কথা বলে উনাকে স্বভাবিক রাখবো। আমার নিজের ছবি তোলার ব্যাপারে কেনো শখ নেই, সেটার জন্য আজ আফসোস হয়, স্যারের পাশে বসে একটা ছবি ও তুলিনি।

মানুষ হিসেবে তার অনন্যতা এখানেই যে উনি নিজের ফিরিস্তি করেননি। এতবড় একটা আঘাত শুধু তার চোয়াল বাঁকা করে দিয়েছে । তার মন হয়ে গিয়েছিল দ্বিগুণ উদ্যমী। নিজের স্বাস্থ্যের কথা অল্প কথায় শেষ করে খবর নেওয়া শুরু করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। আমরা কিভাবে আন্দোলন করেছি, কে কে পুলিশী র্নিযাতনের শিকার হয়েছে। স্যার অসুস্থ থাকা অবস্থায় উনার সন্তানরা দৈনিক পত্রিকা এবং অন্যান্য মিলিয়ে ৫০০০ এর ও বেশী পেইজ কালেক্ট করে রেখেছে। বিভিন্ন মানুষ এসে ঐ ঘটনা নিয়ে যেখানে যত লিখা হয়েছে সব দিয়ে গেছে। অবিশ্বাস্য ব্যাপার হচ্ছে উনি সেগুলো পড়া শুরু করে দিয়েছেন। একটা বই লিখবেন। নামট া আপনারা সবাই জানেন । আমাকে বলেছিলেন, তোমরা যে যা করেছ, যা যা দেখেছ, এই ঘটনা এবং তার পরর্বতী আন্দোলন, র্কাজন হলে পুলিশের হামলা; তোমাদের সব অনুভূতি একটা সাদা কাগজে লিখে আমাকে দাও। সবচেয়ে ভাল হয়, একটা ক্যাসেটে তোমরা কথা রের্কড করে দাও, কারন সবাই লিখে প্রকাশ করতে পারেনা। বলার মধ্যে যে আবেগ আর অনুভূতি থাকে সেটা লিখায় প্রকাশ সম্ভব না। তোমাদের যে খরচ হবে সেটা আমি দিয়ে দিব। তুমি পরিচিত সবাইকে বল, তোমারা আমার জন্য যা করেছ, যে ভালবাসা দেখিয়েছ সেটার জন্য আমি অভিভূত। আমি ভাবতেও পারিনি, আমার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা পুলিশের মার খাবে। লিপন ভাই পুলিশ কাস্টডিতে মার খাচ্ছে শুনে খুব কষ্ট পেলেন। তোমরা আমার জন্য আরেকটু কষ্ট কর, তোমাদের কথা রের্কড করে আমাকে দাও।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা প্রসঙ্গে সাহস করে শিক্ষক সমিতি র্কতৃক উনাকে নিয়ে ঘটা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যার্বতন প্রোগ্রামটার কথা পেড়ে ফেললাম। তীব্র বিরক্ত উনি প্রোগ্রামটা নিয়ে ।শিক্ষক সমিতি জিনিসটাকে উনি এই জীবনে কখনোই পছন্দ করতে পারেননি।

তীব্র বিবমিষা বোধ করি, যখন দেখি শস্যহীন, ভূমিহীন,শাপলা-শালুক হীন জীবন । আম সেমাই হীন ঈদ, প্রতিমা হীন পূজো , শীৎকার হীন মিলন আর ভূমিহীন সংস্কৃতি। মনে হয় যেন বন্দুকের মুখে অ্যার্পাটমেন্টে উঠিয়ে দিতে চাইছে ।

হুমায়ুন আজাদের কয়টা প্রবচন দিয়ে শেষ করি , (স্মৃতি থেকে দিচ্ছি, হুবহু হবে না )

'' সংসদ হচ্ছে তিনশ শুয়োরের খোয়াঁড়। ''

'' টিভিতে এরোপ্লেন র্মাকা আলকাতরার বিজ্ঞাপনে বলা হয় গাড়ির বডি, বাড়ির ছাদ , নৌকা সব জায়গায় আলকাতরা লাগান। আমি বলি সবচেয়ে আগে টিভি স্ক্রিনে লাগান।''

হুমায়ুন আজাদ আপনি যেখানেই থাকুন আমাদের জন্য র্প্রাথনা করুন। বাচ্চা শুয়োর যেমন বাপের পাছায় কামড় দিয়ে, নতুন গজানো দাঁত পরীক্ষা করে, আমরা যেন সেরকম না হই।

=======================================

চৌঠা জুন, ২০০৬
রাত ২:৫০
কলাম্বিয়া।



No comments: