একটি আস্ত ছিনতাইয়ের মস্ত বিবরণী -২
 
ছিনতাই এর পরের অনুভূতি  খুব ভয়ংকর। টাকা যাওয়াটা  খুব বড়  বিষয় না ।  আমার  একধরনের  অসহায়ত্বের   অনুভূতি   হয়েছিল । স্বাধীন  দেশের  স্বাধীন  নাগরিক   আমি , আমার  পুরো  মাসের ইনকামের  টাকা  একজন  এসে  নিয়ে নিল ।  আমি কিছু  করতে  পারলাম না ।  এই  কিছু  করতে না  পারার  অনুভূতি কি  পীড়াদায়ক  আমি লিখে  বোঝাতে পারবো না ।  আমার  কখনো এরকম হয়নি ।   আমার  সাথে  থাকা বান্ধবী কে টিজ  করেছে , আমি   ভি. আই.পি  রোডে    শেরাটনের সামনে  কলার  ধরে ঝাকাইছি । আমার  বোনের ব্যাগ  টান দিয়ে  নিয়ে গেল , ট্যাক্সির পেছনে  আধা কিলোমিটার   দৌড়িয়েছি। ব্যাগ উদ্ধার   করতে  পারি নাই  ,  বাট  আই  ট্রায়েড  মাই  বেস্ট। আমার কাছ থেকে  নিয়ে  গেল  আমি একটা কাঠ পুতলার মত দাড়িয়ে রইলাম  ।  আমার মনে  হয়েছিল ,  যদি  আমার মাকে বলি , আমি কিছু  করতে পারি নাই  আম্মা  ।  উনি  বলবে  তুই  ঘর থেকে  বাইর  হয়া যা। It’s a feeling of anguish। আমি যদি  মন্ত্রির পোলা হইতাম, এই  টাকা-মোবাইল উদ্ধার করতে এক ঘন্টা লাগত ।  নিজেকে  ক্ষমতাহীন , পঙ্গু অনুভব  করেছিলাম তখন  । 
কি করি ,আমার  দোস্তর (অমি)  সাথে   আলাপ করলাম, ও বলল, 'থানায় কেস করতে  হবে'।
আমি  বললাম 'লাভ কি, শুধু  শুধু সময় নষ্ট '। ও যেটা বলল সেটা আমার জীবনে  আমি  ভুলবনা ।
' তুমি তোমার জিনিস ফেরত পাবা না আমি জানি ,  কেস করে লাভ নাই  , আমি জানি । কিন্তু তুমি  যদি  আজকে  কিছু না   করে  চুপচাপ  বাসায়  চলে যাও ,  আজ  থেকে  দশ  বছর বাদে কি বলবা নিজেকে ।  তুমি   তোমার সার্মথ্যের  মধ্যে   যতটুকু   সম্ভব  , ততটুকু  প্রতিবাদ  ও করো   নাই ।  প্রতিবাদ এমন একটা   বিষয়  ,  যেটা   সম্ভব  কি, অসম্ভব    চিন্তা  করে করা  হয় না । এটা  করতে হয়  নিজেকে  সমুন্নত  রাখার জন্য ।  '  
যাও  এবার খই   ভাজতে ।   ধানমন্ডি থানা  ।  মনে  হলো যেন  কাক-বক-শকুন    সব  একত্র    হইছে ।  কিচির মিচির  ।   ও. সি  নাই  ,  স্যার  জগিং  এ গেছে  ।  কিছুক্ষণ   অপেক্ষা  করার  পর  , তিনি  আসলেন   একজন  এস. আই  কে  বললেন বিষয়টা  দেখতে ।  আমার  ঐ  বন্ধু   মুখে  হম্বি-তম্বি ,কিন্তু  ওইখানে  গিয়া  দেখি লাচ্ছা সেমাই  হয়া গেছে । এস. আই  (নাম ভুলে গেছি ) সাহেব  বেশ  ভাল,  ইয়ং । পরীবাগ যাওয়া  হল ।
রাস্তায়  দাড়িয়ে    ছিনতাইয়ের   অনুপুংখ র্বণনা  দিলাম। কেমনে  নিল ,   কি  নিল ,   নিয়ে  ওরা  কোনদিকে  গেল  ।  এর মধ্যে   হাবিলদার (মনে হয়)   একজন  জিজ্ঞাসা   করতে লাগল, 
''  কোন   মডেলের  সেট  ''
'' নোকিয়া  ৩১০০''
'' কত টাকা  ''  
আমার  ধারণা  হওয়া  শুরু  হল ,    লাভের  বখরায়  যাতে  কম না  পড়ে  , তাই  এত   জিজ্ঞাসাবাদ
এদিকে  এস.  আই  সাহেব  , তার  কাহিনী  বলা , শুরু  করেছেন । আমার   দোস্ত  ফোনে   গুটুর - গুটুর শুরু  করছে   প্রেমিকার  সাথে  ।
''  ভাই  জানেন  পুলিশের  চাকরী  নেওয়ার পর  থেকে  বিয়ে শাদীতে  যাই না  , আত্মীয় স্বজনের । লোকজন  কেমন  করে জানি দেখে । আমি  অমুকের পোলা ,  বা  অমুকের  স্বামী   বা  অমুকের  বাপ  হিসেবে দেখে না ।  পুলিশ  হিসেবে দেখে ।  গত  সাত মাসে  দুইটা  পোস্টিং  ।   বাচ্চাটার  বয়স  ৩ বছর , কতদিন  বউ-বাচ্চারে দেখিনা । ''  
যাই  হোক , শেষ র্পযন্ত  ওই  এস. আই   বললেন   ,  ইর্স্টান   প্লাজার   সামনে  যে আইল্যান্ড  তার  একপাশ  পরে  ধানমন্ডি  থানায়   আরেক পাশ  রমনা  থানায়  ।  আমারটা   পরছে  রমনা  থানায় ।  বোঝো ল্যাঠা ।   এবার  রমনা  থানা থেকে  একটা  গাড়ি  আসল   ।  এর মধ্যে   লোকজন  দেখে যাচ্ছে ,  একগাদা  পুলিশ   জটলা ,  মাঝখানে  আমি  কুতুব ।   রমনা  থানার  গাড়িটা  আসার পর   ঠিক  হলো  ,  আমি -রমনা  থানার এস. আই  ড্রাইভারের  পাশে  বসে   পুরা এলাকা  চককর দিব ।  এরা  এডিক্টেড  , কোথাও  বসে মাল  টানার  সময়  যদি  ধরা  যায়  ।    ওরা  আমাদের মত  অত বেকুব না ,  অনেকক্ষণ  ঘোরাঘুরি   করে ও   পাই   নাই  ।  
রাত  দশটায়   গেলাম  রমনা  থানা ,  জি.ডি  করব। এর  আগে  ও  একবার  জি.ডি  করছি, কিন্তু  বছর দুই  আগে । আমি   ফরম্যাট     তৈরী   করে   ওখানে যার টেবিলে  বসে লিখতেছি  তারে  দেখাইলাম । ওরা  পছন্দ  করে ওদের কাছ থেকে   ইনসট্রাকশন  নিয়ে  লিখা। আমি   ইনসট্রাকশন  নিই  নাই  বলে   , এই  শালা মনে হয় ক্ষেপে গিয়ে খেকঁশিয়ালের  মত   করে উঠল ,  
''আপনারা ঢাকা র্ভাসিটিতে   পড়েন, জানেন না  , কেমনে লিখতে হয় ' 
আমরা  যেন  জি.ডি   লিখা  শিখি  র্ভাসিটিতে।  
যদিও  আমার লিখাটা  ঠিক  ছিল  ,  ওটাই    নিয়েছে শেষ র্পযন্ত ।
কোন কিছুই  আর  পাইনি   ।  
** যারা পড়বেন তাদের অনুরোধ করবো, ছিনতাই এর পরের অনুভূতি দু কথায়  লিখতে ।
=======================================
২৪ শে মে  ২০০৬ 
সন্ধ্যা  ৭:১১ 
কলাম্বিয়া ।
No comments:
Post a Comment