২৮ শে ফেব্রুয়ারী
জীবন রীতিমতো এলেমেলো হয়ে যাচ্ছে।
আজব সময়ে ঘুমোই, জাগি আরো আজব সময়ে
মার্চ এর দু তারিখের পর যদি কিছু হয় কি ?
হঠাৎ করে কবিতা সব আমাকে ছেড়ে চলে গেছে
এমন সময়ে তাঁর ছেড়ে যাওয়া কি শোভা পায়।।
জীবন রীতিমতো এলেমেলো হয়ে যাচ্ছে।
আজব সময়ে ঘুমোই, জাগি আরো আজব সময়ে
মার্চ এর দু তারিখের পর যদি কিছু হয় কি ?
হঠাৎ করে কবিতা সব আমাকে ছেড়ে চলে গেছে
এমন সময়ে তাঁর ছেড়ে যাওয়া কি শোভা পায়।।
কুৎসিত এক বিবমিষা বোধ করি মাঝে মাঝে। সব কিছু থেকেই উঠে যায় মন। আমরা এক বিচিত্র ধরনের সমাজিক জীব। নিজের পছন্দ- অপছন্দ সব কিছু নিয়ে জড়াজড়ি করে বাস করতে হয়। উপায় নেই, গোলাম হোসেন। সমাজের গোলাম হলে এরকম হবেই।
হুমায়ুন আজাদ কি এরকম বোধ করতেন ? আমি জানি না। তবে আমি এটুকু বুঝতে পেরেছিলাম যে উনি সাধারন মানুষ না।
হত্যা প্রচেষ্টা থেকে ফিরে, সুস্থ হয়ে আসার পর আমি উনার বাসায় গিয়েছিলাম। আমি, ফ্রন্টের রায়হান ভাই, অমি। দরজা খুলে দিয়েছিল মৌলি। অমি তার স্টোরির অংশ হিসেবে স্যারের ছবি তুলবে। আমি, রায়হান ভাই স্যারের সাথে কথা বলে উনাকে স্বভাবিক রাখবো। আমার নিজের ছবি তোলার ব্যাপারে কেনো শখ নেই, সেটার জন্য আজ আফসোস হয়, স্যারের পাশে বসে একটা ছবি ও তুলিনি।
মানুষ হিসেবে তার অনন্যতা এখানেই যে উনি নিজের ফিরিস্তি করেননি। এতবড় একটা আঘাত শুধু তার চোয়াল বাঁকা করে দিয়েছে । তার মন হয়ে গিয়েছিল দ্বিগুণ উদ্যমী। নিজের স্বাস্থ্যের কথা অল্প কথায় শেষ করে খবর নেওয়া শুরু করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। আমরা কিভাবে আন্দোলন করেছি, কে কে পুলিশী র্নিযাতনের শিকার হয়েছে। স্যার অসুস্থ থাকা অবস্থায় উনার সন্তানরা দৈনিক পত্রিকা এবং অন্যান্য মিলিয়ে ৫০০০ এর ও বেশী পেইজ কালেক্ট করে রেখেছে। বিভিন্ন মানুষ এসে ঐ ঘটনা নিয়ে যেখানে যত লিখা হয়েছে সব দিয়ে গেছে। অবিশ্বাস্য ব্যাপার হচ্ছে উনি সেগুলো পড়া শুরু করে দিয়েছেন। একটা বই লিখবেন। নামট া আপনারা সবাই জানেন । আমাকে বলেছিলেন, তোমরা যে যা করেছ, যা যা দেখেছ, এই ঘটনা এবং তার পরর্বতী আন্দোলন, র্কাজন হলে পুলিশের হামলা; তোমাদের সব অনুভূতি একটা সাদা কাগজে লিখে আমাকে দাও। সবচেয়ে ভাল হয়, একটা ক্যাসেটে তোমরা কথা রের্কড করে দাও, কারন সবাই লিখে প্রকাশ করতে পারেনা। বলার মধ্যে যে আবেগ আর অনুভূতি থাকে সেটা লিখায় প্রকাশ সম্ভব না। তোমাদের যে খরচ হবে সেটা আমি দিয়ে দিব। তুমি পরিচিত সবাইকে বল, তোমারা আমার জন্য যা করেছ, যে ভালবাসা দেখিয়েছ সেটার জন্য আমি অভিভূত। আমি ভাবতেও পারিনি, আমার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা পুলিশের মার খাবে। লিপন ভাই পুলিশ কাস্টডিতে মার খাচ্ছে শুনে খুব কষ্ট পেলেন। তোমরা আমার জন্য আরেকটু কষ্ট কর, তোমাদের কথা রের্কড করে আমাকে দাও।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা প্রসঙ্গে সাহস করে শিক্ষক সমিতি র্কতৃক উনাকে নিয়ে ঘটা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যার্বতন প্রোগ্রামটার কথা পেড়ে ফেললাম। তীব্র বিরক্ত উনি প্রোগ্রামটা নিয়ে ।শিক্ষক সমিতি জিনিসটাকে উনি এই জীবনে কখনোই পছন্দ করতে পারেননি।
তীব্র বিবমিষা বোধ করি, যখন দেখি শস্যহীন, ভূমিহীন,শাপলা-শালুক হীন জীবন । আম সেমাই হীন ঈদ, প্রতিমা হীন পূজো , শীৎকার হীন মিলন আর ভূমিহীন সংস্কৃতি। মনে হয় যেন বন্দুকের মুখে অ্যার্পাটমেন্টে উঠিয়ে দিতে চাইছে ।
হুমায়ুন আজাদের কয়টা প্রবচন দিয়ে শেষ করি , (স্মৃতি থেকে দিচ্ছি, হুবহু হবে না )
'' সংসদ হচ্ছে তিনশ শুয়োরের খোয়াঁড়। ''
'' টিভিতে এরোপ্লেন র্মাকা আলকাতরার বিজ্ঞাপনে বলা হয় গাড়ির বডি, বাড়ির ছাদ , নৌকা সব জায়গায় আলকাতরা লাগান। আমি বলি সবচেয়ে আগে টিভি স্ক্রিনে লাগান।''
হুমায়ুন আজাদ আপনি যেখানেই থাকুন আমাদের জন্য র্প্রাথনা করুন। বাচ্চা শুয়োর যেমন বাপের পাছায় কামড় দিয়ে, নতুন গজানো দাঁত পরীক্ষা করে, আমরা যেন সেরকম না হই।
=======================================
চৌঠা জুন, ২০০৬
রাত ২:৫০
কলাম্বিয়া।
শীত বিদায় বোধহয় নিচ্ছে শেষ পর্যন্ত। আজকের দিনটা বেশ ঊষ্ণ ছিল। সকালে রোদটা তাতানো হলেও, দিন যতই গড়িয়েছে মেদুল হাওয়া বাড়ছিলো। বাসায় যখন আসছিলাম, দেখি নীল আকাশ আর হুহু হাওয়া। এটা ঠিক বৃষ্টির আগমনী বার্তার মত ছিলো না। নরম এবং আদ্র হাওয়া।
ক্লাস টেনে পড়বার সময় আহসানউল্লাহ্ স্যারের কাছে পড়বার পর সদরঘাটে কর্ণফুলী'র পাড়ে যেতাম ঠিক সেই সময়টার কথা মনে হচ্ছিল। আরো বেশী করে সামঞ্জ্যস্য পাচ্ছিলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে'র সময়গুলোর সাথে। অনেকদিন পর কলাম্বিয়াকে নিজের মনে হলো, খুব নিবিড় এবং
সান্নিধ্যঘন হাওয়ারা লুকোচুরি খেলছে সময় এবং স্মৃতি'র একটা ম্যাট্রিক্সে। আমার সবচেয়ে প্রিয় ঋতু এসে গেল বলে। এই বসন্ত ক্ষণস্থায়ী কিন্তু প্রচ্ছন্ন একটা প্রভাব কি রেখে যাবে আমার জীবনে।
ইচ্ছে করে এই হাওয়াদের নিয়ে নকশা বুনি
শব্দের পসরা দিয়ে নাই বা পারি
মৃদু মন্দ ইশারা, আর কপোতাক্ষ চাউনি
হাত বুলিয়ে দিই, রেঁনোয়া'র তুলিতে আঁকা বায়বীয় শরীরে
আমাদের মাগধী রমনী কখনো রেঁনোয়া দেখেছেন কিনা আমি জানি না। দেখলে কিভাবে বায়বীয় অবয়ব দিতেন খুব দেখতে ইচ্ছা হয়।
একুশের বইমেলা নিয়ে উচ্ছসিত ছিলাম কলেজ লাইফে। ভীষণ আনন্দিত এবং উদ্বেলিত থাকতাম ঐ সময়টায়। পরে পরে সেই উচ্ছাস আর ছিল না। শেষ কয়েক বছর বইমেলায় যাওয়া হয়েছে অনেকটা অভ্যেসের বশে। একটা বইমেলা আমাকে ভীষণ আনন্দ দিয়েছিল এবং সেই আনন্দ আমি আজও অনুভব করি। মুক্তধারা বাংলাদেশের বড় বড় জেলা শহরগুলোতে বইমেলার আয়োজন করতো। সেই বইমেলার দুই স্টলের মাঝে করিডোরে হাঁটার ছন্দ আমি এখনও ভুলতে পারিনা। শিশু-কিশোরদের জন্য এত বই বের করতেন চিত্তদা যেটা এখনকারও কোন পাবলিশার এর জন্য কল্পনা। মুক্তধারাকে বাঁচানোর জন্য কেউ এগিয়ে আসলো না। প্রিয়জন হারানোর একটা অনুভূতি হয় যখন ভাবি মুক্তধারা আর আগের মত বই বের করে না, বইমেলা করে না।
সেই মাগ্যির যুগে যখন একটা টিনটিন আশি টাকা, তখন ক্যাপ্টেন কুক (রঙ্গিন ছবি সহ) কিনেছি আঠারো টাকায়। এখন ভাবলে নিজের চোখে এক হাভাতে টোকাইয়ের চেহারা ভেসে উঠে যে দুই হাত উপচে পড়ার পরও নিতে চায়। বাংলাদেশে একমাত্র মুক্তধারাই কম দামে রঙ্গীন ছবি সহ এরকম চমৎকার সব বই দিত। এ ধরণের বই অবশ্য ভারতে বেশ অনেক পাবলিশার দেয়। যায় যায় দিন, মানবজমিন কিংবা রসে ভরা টাংকি পত্রিকার জন্য বিনিয়োগকারীর অভাব হয়না, কিন্তু শিশুদের এক টুকরো স্বপ্ন পূরণের জন্য বিনিয়োগকারীর অভাব হয়। বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্স হয়, ফার্মগেটে স্টিলের মাছ হয়, এম পি' দের ভর্তুকি দেয়া গাড়ী হয় কিন্তু মুক্তধারা, অগণিত অন্ধকার গলির মত বুজে যায়।
অনেকেই বলে এবং আমি নিজেও মাঝে মাঝে ভাবি আমি বোধ হয় স্বপ্ন দেখি, কিংবা অতি বাস্তবতার ঘেরে আটকে পড়া চিংড়ি আমি। কিন্তু আমার ভীষণ কষ্ট হয় মুক্তধারার
জন্য। আমার ভীষণ কষ্ট হয় এখনকার শিশুদের জন্য। তারা জানলো না কিভাবে রেডইন্ডিয়ান হত্যা হয়েছিল আমেরিকান মেইনল্যান্ডে, ক্যাপ্টেন কুকের কথা জানলো না, জানলো না তিতুমীরের বাঁশের কেল্লার কথা।
ভীষণ ব্যক্তিগত একটা পরাজয়ের মত মনে হয় আমার এই বিষয়টাকে।
একুশের বইমেলায় ১৯ ৯৮ এর পর যাওয়ার আগ্রহ পেতাম না, নির্দিষ্ট কয়েকটা স্টল ঘুরেই খালাস। বড় বেশী রকমের আলপটকা রোমান্সের বইয়ে মেলা ভর্তি থাকতো। বেশীরভাগ স্টলের মুখব্যাদান থাকতো হুমায়নে, ইমদাদুল হক মিলন, জাফর ইকবালে। অন্য সব লেখকের বই স্টলগুলোতে এবং পুরো বইমেলা জুড়ে এমনভাবে থাকতো যেন বইগুলো খুব লজ্জিত। হুমায়ুনের বইমেলায় ঠেলেঠুলে জায়গা করেছে, কৃপাধন্য তারা একটু খানি শ্বাস নিতে পেরে। মনে হতো যেন হাঁসের সভায়, বক ঢুকে পড়েছে। একটা বিবমিষা বোধ থেকে আগ্রহ হারিয়েছিলাম।
( চলবে )
* চিত্তরঞ্জন সাহা করকমলে
কিছুদিন আগে পরিণীতা ছবিটা দেখছিলাম। ছবিটায় একটা অংশে ছিল র্দূগা পূজা। পূজার ঢাকের সাথে তাল মিলিয়ে উম্মাতাল নাচ। অনেকদিন পর, অনেক অনেক দিন।
একটা সময় ছিল যখন অক্টোবর মাসের কোন একটা দিন ভোরবেলা মাইকের শব্দ শুনে বেরিয়ে উঠে পড়েছি মায়ের হাত গলে। খুব ভোর, মিহি বাতাস ঘাসের ধারালো প্রান্ত ধরে ছুটে চলেছে ।
মা র্দূগা র্দূগতিনাশিনী, এসে পড়েছেন আমাদের রোজকার ডাল-ভাত মাপের জীবনে আনন্দের ধ্বনি নিয়ে। আমার ক্ষণস্থায়ী বাল্যকালের ম্যাজিক রিয়েলিজম এর নাম র্দূগা পূজা ।
সকাল থেকে মাইকে ভক্তি সংগীত, এরপর পুরোনো বাংলা ছবির গান। লতা-আশা-সন্ধ্যা'র গান এতো বেশী শুনেছি এই পূজায় , আমার আর শোনার প্রয়োজন হয়নি গানগুলো। সবচেয়ে বেশী সংখ্যকবার শোনা গানটা হচ্ছে , ''তুমি আমার নয়ন গো , যে নয়নে দেখি গো...'' , '' জন্মদিনে কি আর দেব তোমায় উপহার '', '' গুরুদক্ষিণা'' ..........। সাথে সমসাময়িক হিন্দি ছবির হিট গান '' সাজন সাজন ও মেরে সাজন... '', '' তুমসে মিলকে এ্যায়সা লাগা তুমসে মিলকে '', '' এক দো তিন ......'' । দুপুর বারটায় শুরু হতো লাইভ পূজা পাঠ। দুপুরে মধ্যাহ্ণ ভোজনের বিরতি, সাথে একটু আলতো গড়াগড়ি বিছানায়। বিকাল থেকে আবার শুরু গান। তবে সন্ধ্যার পর গান বন্ধ। ঢাক-ঢোলের বাজনা শুরু (আমি ঢাক এবং ঢোলের তফাৎ ভুলে গিয়েছি তাই দুঃখিত), সাথে খোল-করতাল।
দেবীকে সামনে রেখে নাচছে সবাই, সে কী ভীষণ প্রণোদনা নাচে। নাচটার মধ্যে অদৃশ্য শক্তির র্প্রাথনা যতখানি তারচেয়েও বেশী ছিল জীবনের সব তুচ্ছতার গন্ডি অতিক্রম করে নিজেকে মেলে ধরবার এক প্রবল বাসনা।
শিশু আমার একটা সময় গিয়েছে একগাদা প্রশ্নে। আমার দোস্ত রানা, শান্তুনু, বাপ্পা এদের মাথা খারাপ করে দিয়েছি একশো একটা প্রশ্নে। দেবীর পায়ের নীচে কে? দেবীর দশ হাত কেন ? মানুষের দশ হাত হয় নাকি ? পাশে এগুলো কে ? কেন তিনি আসেন ? কিভাবে আসেন ? কেন এবার ঘোড়ায় চড়ে এলেন ? কই আমি তো দেখিনি ঘোড়া ?
নদীর স্রোতের মত কৌতুহল , একটা ঢেউ যেতে না যেতেই একটা , আবার একটা আবার একটা। পরের বছ র রাত জেগে বারান্দায় দাড়িয়ে ছিলাম দেখবার জন্য এবার হাতি চড়ে আসবে দেবী। নি˜্রাদেবীর কারণে হলো না দেখা।
বড় হই আর বুঝতে থাকি এই দেবীর অবয়ব তার আর্দশের প্রতিফলন। দশ ভূজে তিনি তার সন্তানের দেখ ভাল করেন, রক্ষা করেন , লালন করেন , সব করেন তিনি দশ দিক সামলান। তিনি ধরিত্রী সমান। ধরিত্রী দিয়েই বানানো দেহ। আবার চলে যায় ধরণীর কোলে। কি এক অপরুপ র্নিমাণ। কি এক অদ্বৈত চেতনা। একই অঙ্গে কত রুপ মায়ের।
বছর ঘুরে বছর আসে। আমি দেখি , আমি শিখি , স্রোতেরা মুখ ছেড়ে , মাথায় খেলা করে। কি এক অপরুপ রুপের আধার হয়ে সবার কাছে মা আসে , সবারই মা থাকে। অথচ আমরা ঠিক মায়ের সর্ব কূল হেরি রুপ অবলোকনে র্ব্যথ হই।
ঢাকের শব্দ অনেক বছর আর কানে আসেনা, আমার মস্তিষ্কে খেলা করে ঢাকের ˜্রমি-˜্রমি তাল। একটা অব্যক্ত বেদনা অনুভব করি। চকচকে আধূলি হারানো বালকের মত ক্ষত-বিক্ষ ত হৃদ য়ে অপেক্ষা করি অক্টোবর মাসের কোন এক ভোরের জন্য। ঘাসের বুকে জমা শিশির আলতো পায়ে টোকা দিয়ে এগিয়ে যাব, প্যান্ডেলের বাঁশ ধরে দাড়িয়ে দেখব মায়ের সাজ সজ্জা।
[আমার শৈশব এবং বাল্যকালের সবচেয়ে প্রিয় স্মৃতি এই র্দূগাপূজা। অনেক মমতায় যেকয়টা স্মৃতি এখনো স্পিরিট দিয়ে ধুয়ে মুছে রাখি সেটা এই পূজোর ঢোল। যার দেখা পাইনা অনেক বছর। আমার মাকে শুধু এই ভাবে ঢোল বাজিয়ে কাব্যনাট্য আর পালাগানের পালা উৎর্সগ করে বলতে চাই , আমি আনন্দিত এবং র্গবিত তাঁর সন্তান হতে পেরে। এই প্রসাদ টুকু সবার সমীপে পেশ করছি সেই বাসনায় ।]
লিখা হয়েছিলঃ ২৫’ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৬ ।
নতুন ডেরায় আর্ন্তজাল সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বিধায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন রমজানীয় ঘোমটা দেওয়া পাঠিকা। অদ্য হইতে তিন সপ্তাহের মধ্যে আপনার মধ্যযুগীয় ডেরায় উওরাধুনিক ওয়্যারিং করা হইবে। তদ্যবধি আবহাওয়া সংবাদ দেখুন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, দিনাজপুর, রংপুর , কুষ্টিয়া, পাবনা ইত্যাদি বিভাগীয় এবং হবু বিভাগীয় শহরে রোদ-বৃষ্টি-বজ্র সহ বৃষ্টি-বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরোবৃষ্টি- দমকা-হালকা- দুলকি- ক্যাটওয়াক সহ নানাবিধ চালে হাওয়া আসতে পারে । বিভিন্ন শহরের তাপমাত্রা বিভিন্ন রকম তাই ১-১০০ সব তাপমাত্রাই দিকে দিকে দেখা দিতে পারে। উন্নয়নের জোয়ার এই সরকার আসার সময় যেটা শুরু হয়েছিল সেটা এখনো প্রবল বেগে চলছে। থামাথামির কোন নাম নেই। নাম আগে যা ছিল সব পালটে দেওয়া হয়েছে , কোথাও কোন নাম কুনা কানচিতে বাদ পড়লে আওয়াজ পাড়বেন তৎক্ষণাৎ পালটে দেওয়া হবে। আমাদের দুই ফটকাবাজ নেতা সংলাপ নামক মালকা-মালকিতে ব্যস্ত আছেন। দেশব্যপী তড়িৎবিপ্লবের নেতৃত্ব দেওয়া, জনগণের পাছা আংগুল দিয়ে বহাল তবিয়তে ইফতার আলাপন করে যাচ্ছেন আপা-দুলাভাইরা। সবাই ব্যস্ত সামনের খেলার সূচী নিয়ে। খেলা দিবারাত্রি হবে নাকি আধোরাত্রি ? কে রেফারী হবে ? কে হবে লাইন্সম্যান ? কে হবে ম্যাচরেফারী ?
জনগণ চনা কিনতে গেলে ডাল কিনতে পারেনা। খেজুরের দাম শুনলে মনে হয় বেহেশতি খেজুর দুনিয়াতে আইসা পড়ছে। চালের দাম তরতরিয়ে উঠে গেছে গাছের আগায়।
বাজারে পাকিস্তানী লেহেংগা আর ইন্ডিয়ান শাড়ী-পানজাবী আসা শুরু হয়েছে। আমাদের দেশ উদ্ধার করা দৈনিক গুলোর প্রথম পাতায় কোন বাজারে ১ লাখ টাকার শাড়ী , কোন বাজারে ১.৩০ লাখ টাকার লেহেংগা এসছে খবর দেবে। পাশের কলামে আবার এসিডদগ্ধদের জন্য তহবিলের খবর থাকবে। ঈদ ফ্যাশন সংখ্যা বের হবে। নামীদামী রাইটাররা দুহাতে লিখে যাবেন চাঁন রাত ভর ঈদ সংখ্যার জন্য। যার বেশীরভাগই ঈদের চাঁদের মত আধঘন্টা বাদে মনের আকাশ থেকে উধাও হয়ে যাবে। আহা আমাদের শিশুরা তারা ঈদে পেতে পারেনা , আনন্দমেলা পূজার্বাষিকীর মত সুললিত সাহিত্য।
পত্রিকার পাতা ভরা থাকবে মিসেস সালমা আর রহিমার মুখরোচক খাবারের রেসিপি, কিন্তু উপাদানগুলো আওতার বাইরে আকাশের তারার মত ছিনিমিনি খেলবে।
এর মধ্যে বেকুবেরদলা প্রেসিডেন্ট ঈদেরদিন জনগণের সাথে করর্মদন করবেন সারাদিন। আহা এই প্রেসিডেন্ট পদটা না থাকলে বেচারা গণভবনের খানসামাদের এই কাজটা করতে হতো। কি ভালো প্রেসিডেন্ট ,কি অবলীলায় অপ্রয়োজনীয় সব কাজ ডুগডুগি বাজাতে বাজাতে করেন।
ঢাকা শিশুর্পাক সেদিন সবার জন্য উম্মুক্ত থাকবে, পথের শিশুরা সেমাই এর খোঁজে দ্বারে দ্বারে ঘুরবে, শিশুর্পাক জমজমাট হবে বুড়োদের কলরবে। টিভিতে আনন্দমেলার নামে একটা উৎকট স্যুট পরা লোক খালি হে হে করে যাবেন। বিদেশী ফুটেজ দেখাবেন অনুবাদ করে, সাথে নায়ক-নায়িকাদের কুইজ কনটেস্ট।
আমাদের জনগণ মাথাপিছু র্কজের ভারে নুয়ে যাবেন। কৃষকেরা ডিজেলের হাহাকারে রোদন করবেন। এমপিরা ঈদ পুর্নমিলনীতে কোন নায়িকা নাচালে যুবরাজ খুশি হবে সেটা ভাববেন।
র্সবোপরি চাঁদটা এক জায়গায় আটকে থাকবে। জোয়ারই জোয়ার। ভাটা আর আসবে না। নতুন সরকার এসেই সদ্যজন্মানো ভাটাকে , পেঁদিয়ে জোয়ার বানিয়ে দেবেন। কিছুদিন পরপর বলবনে গত সরকার দায়ী ৪৩৩২ পাতার শ্বেতপত্র বের হবে। বিদ্যুৎ ঘাটতি মোকাবেলায় এক চিমটি এখানে লোডশেডিং , এক খাবলা ওখানে , পুরোটাই গাপ করে দেবেন ঢাকার বাইরে। কানসাটে তবুও মাসের শেষে বিদ্যুৎ বিল যাবে, প্রতিবাদ করলে গুলি । এরপর আমাদের প্রথম সারির লোকজন বলবেন এসব ধান্ধাবাজি । আবার ঈদ আসবে , আবার লেহেংগা , আবার চুলের ফিতা , আবার ইলেকশন ।
লিখা হয়েছিলঃ ৬’ই অক্টোবর, ২০০৬