বিকিয়ে যাওয়া ঈশ্বর
অ .
তখন ছিলাম থার্ড ইয়ারে। জীবনযাপন নিয়ে খুব বেশী ভাবিত নই। টিউশানি আছে মাসের শেষে টাকা আসবে। তিন মাস টিউশানি না করার নিশ্চয়তা ব্যাংকে রেখেছি। বেশ সুখী জীবন বলা চলে নিশ্চিতভাবেই এটাকে। খাই , ঘুমাই , ক্লাস করি। সকালে কার্জন হল দিয়ে শুরু, দুপুরে মধু , বিকালে শাহবাগ, সন্ধ্যায় টিএসসি হয়ে রাতে ঈশা খাঁ রোডে গপ্পোবাজির সীমানা।
এরকম একটা দিনে সন্ধ্যায় রুনু মুখার্জীর বংশীবাদন শুনতে যাদুঘরে ঢুকেছি, ঢুকার সময় বেশ চেক আপ হল, বুঝলাম না। অনুষ্ঠান শেষে বের হয়ে দেখি চারিদিকে একটা গুমোট ভাব। পরদিন চট্টগ্রাম যাবো, তাড়াতাড়ি ঘর মুখো হলাম। ঘর থেকে সরাসরি বাস স্টেশন।
আমার চট্টগ্রামের বাসায় খবর দেখবার বাতিক আছে। তখনো বিবিসির শাসন চলছে টিভিতে। বড়ভাই পারলে দুইচোখের একটা দিয়ে বিবিসি আর একটা দিয়ে সিএনএন দেখে। বাসায় সকালে পৌঁছেই খবরটা দেখলাম। টুইন টাওয়ার স্ম্যাশড টু গ্রাউন্ড।
এক লহমায় বিশ্বরাজনীতির নতুন পাতা শুরু হল। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। নিউইর্য়ক এর গ্রাউন্ড জিরো থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ জগন্নাথ পাঁড় পর্যন্ত পৌঁছোলো।
আ .
সত্তর দশকের শেষদিকে পাকিস্তান বর্ডারে করা মাদ্রাসাগুলোর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য আরো বিশ বছর বাদে
আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের মধ্য দিয়ে আমরা দেখলাম।
ই .
বাংলা ভাইয়ের ফাঁসি হবে। আমি খুব একটা আনন্দিত নই এই খবরটায়। ব্যক্তিগতভাবে আমি মৃত্যুদন্ডের বিরোধী। আরো ঘোর বিরোধী আমি অপরাধীর ফাঁসির মধ্য দিয়ে পাপের চিহ্ন মুছবার প্রক্রিয়ার। কারণ আমার খুব সাধারণ মস্তিষ্ক বলে, দেশের পাঁচশো জায়গায় একই সময়ে বোমা বিস্ফোরণ করানোর মত সামর্থ্যে বাংলাদেশের হাতে গোনা কয়েকটি সংগঠনের আছে। তার মধ্যে কোনো নাবালক সংগঠন নেই। কিন্তু এক নাবালকের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে, ঘাগুরা পর্দার আড়ালে ইতিমধ্যে চলে গেছে।
ঈ .
আগামী শনিবার বাংলাদেশ-ইন্ডিয়ার খেলা দেখবো। আমাদের নার্ভ টানটান হয়ে থাকবে খেলার প্রতিটি মূহুর্ত।
বউবাজার বস্তি আগুনে পুড়ে গেল। টানবাজার উচ্ছেদ হয়ে গেল সেই কবে। সোনারগাঁওয়ের বস্তিটা উন্নয়নের মডেল হিসেবে আরো কিছু কাল থাকবে।
বিশেষ বাহিনী আরো কিছু রাজনীতিবিদ ধরবেন। বছর তিনেক বাদে সামরিক-বেসামরিক, গৃহপালিত-বন্য মিলিয়ে শ-তিনেক রাজনীতিবিদের সংসদ ভবন ভর্তি থাকবে। নতুন ফাইটার জেট কিনবার জন্য তারা কাড়ি কাড়ি টাকা বরাদ্দ দেবেন।
এ .
আমাদের ছাপোষা জীবনে ঈশ্বর তার অসীম ক্ষমতা নিয়ে সবসময়ই থাকবেন। স্টিফেন হকিং অসীম ঘনত্বের মটর দানা সদৃশ সৃষ্টিরহস্যের কথা যতই বলুন, ঈশ্বর সপ্তর্ষীমন্ডলের চেয়ে ও বেশী উজ্জ্বলতায় আমাদের আকাশে থাকবেন।
ঐ .
এই ঈশ্বর আমার নয়,
কখনোই বোধকরি ছিলেন না
চড়া দামে বিকিয়ে যাওয়া
এই ঈশ্বরের দিকে এক দলা থুতু দিই ।।