ফরহাদ মজহার থ্রেটেন্ড বাই সাইন্স
ফরহাদ মজহার থ্রেটেন্ড বাই সাইন্স।
এইটা একটা হুমায়ুন আহমেদের নাটকের নাম হইতে পারতো। কিন্তু এই জীবনে এখন সবই সত্য।
মজহার সাহেব তাঁর যুদ্ধটাকে টানতে টানতে বিজ্ঞানের দরজায় নিয়ে গেছেন। কারণ তিনি
আলো চান, কিন্তু আলোর উৎস অসহনীয় তাঁর কাছে। তিনি বিজ্ঞানের সুফল চান, কিন্তু
বিজ্ঞান মনে যে প্রশ্ন তৈরি করে সেটা ওনার কাছে আপত্তির।
“কিছু কী আসে যায় এটা
বিজ্ঞানের সত্য কিনা?
ঠিক আছে, বিজ্ঞান থেকে জানলাম, সূর্য হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র। পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ১০৯ গুণ
বড়। হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম ভর্তি এক গ্যাসের বিশাল ফুটবল যার তাপমাত্রা প্রায় ৫০০০
ডিগ্রি সে.। এই নক্ষত্রটিকে কেন্দ্র করেই পৃথিবী ২৯.৭৮৩/সে. গতিতে ঘুরছে। জানলাম,
এবং মানলামও। অসুবিধা তো নাই। কিন্তু পুরাণ, কল্পনা ও সংকল্পের ভূমিকা আর কোনো কিছু জানার ভূমিকা তো এক নয়।বিজ্ঞান যদি তার নিজের জগতে বিরাজ করে, তাহলে
এখানে কোনো দ্বন্দ্ব তৈরির কারণ ঘটে না।“
মজহার সাহেব প্রথমে লেখায় আপনি
আগে তথ্য বিভ্রাট দূর করেন। তারপর তথ্য বিষয়ে জ্ঞান দেন। সূর্য পৃথিবীর চাইতে কোন
কারণে বড়? আয়তন, ওজন, ব্যাসার্ধ, ... কোনটা ?
“কিন্তু বিজ্ঞান যদি বলে, পুরাণ বা মানুষের মিথ বা কল্পনার জগৎ স্রেফ
কুসংস্কার,
সূর্যের আবার ঘোড়া কী? তার আবার চার
সঙ্গিনী কোথা থেকে? তার আবার রথ কিসের? ছাড়ো এসব অবৈজ্ঞানিক চিন্তা; মানুষের প্রগতি
মানে মিথ, কল্পনা ও কুসংস্কার থেকে মুক্তি। যদি বিজ্ঞান
দাবি করে, আমাদের কল্পনা ও চিন্তাশক্তি বাদ দিয়ে শুধু
বিজ্ঞানকেই বিশ্বাস করতে হবে, আর কিছুকে না, তারপর বিজ্ঞান দিন আর রাত্রি কেন হয় তার বৈজ্ঞানিক কারণ ব্যাখ্যা করল। এমন
ভাবে ব্যাখ্যা করল যেন আমাদের মাথা ধোলাই হয়ে পারফেক্ট বৈজ্ঞানিক মস্তিষ্কে পরিণত
হয়; আমরা চিরকালের জন্য সূর্যের সোনার রথ দেখা ভুলে
গেলাম। ভয়ে এসব গল্প কাউকে বলারই আর সাহস পেলাম না। কতো সহজে আমাদের কৈশোর
বিজ্ঞানের হাতে নিহত হয়েছে। কতো কিশোর-কিশোরী বিজ্ঞানের নামে শহীদ হচ্ছে প্রতিদিন-
কে তার খবর রাখে? তারপর সমাজে যখন এই হতাহতের ঘটনা ভিন্ন
এক ব্যাধি হিসেবে ধরা পড়ে, ততদিনে দেরি হয়ে যায়।
মজহার
সাহেব হাওয়ায় শত্রু খোঁজা বাদ দেন। উপরের লাইনগুলো দিয়ে কি বুঝাইলেন? কিশোর-কিশোরীদের
থেকে বিজ্ঞান কি ছিনিয়ে নেয়? আমার কৈশোর আপনার অনেক পরে আসছে। সেটা নিতান্তই
সৌভাগ্যবশত, এবং সে কারণে কৈশোর সম্বন্ধে কিছু বলার এখতিয়ার রাখি। একেবারে বালেগ
সময়ে ভাবতাম, বড় একটা চিলের পা ধইরা ঝুলে পড়লে খুব সুন্দর উপর থেকে পৃথিবী দেখা
যাবে। এক সময় এই ভুল ভাঙ্গছে। সেটা বিজ্ঞান ভাঙ্গে নাই, সময় এবং উপলদ্ধি। বিজ্ঞান
কোন মতবাদ না। বিজ্ঞানে বিশ্বাসের স্থান নাই। বিজ্ঞান তথ্য-উপাত্ত নির্ভর। পৃথিবীতে
এখনো অনেক মানুষ আছে, যারা বিশ্বাস করে পৃথিবী চ্যাপ্টা। বিজ্ঞান কিন্তু তাদের জীবন-যাপনের
লাইসেন্স কেড়ে নেয় নাই। বিজ্ঞান নিজের গতিতেই চলে, একটা মন্দির খুলে কিন্তু খয়রাত
নেয় না প্রচার এবং প্রসারের জন্য। আপনি যদি মনে করেন পৃথিবী একটা বড় কচ্ছপের পিঠে,
এবং কচ্ছপটা হাঁটে বলেই পৃথিবী ঘুরে, কেউ কিন্তু আপনার দিকে হামলা করবে না,
বিজ্ঞানবাদে বিশ্বাস করেন না বইলা। কারণ বিজ্ঞানবাদ বইলা কোন কিছুর অস্তিত্ব নাই,
এবং যেটা নাই সেটার এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য দেশ, রাজনীতি এবং সিলমারা চার্চ নাই।
আপনি কখনো শুনবেন না, একটা দেশ যেটার নাম “সাইন্টিফিক রিপাবলিক অফ পান্ডুভিয়া”। দয়া
করে আমাদের কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী’দের আর বিভ্রান্ত কইরেন না। কারণ আপনার এই লেখাটা সর্ব অর্থেই
বিভ্রান্তিকর।