Mar 8, 2015

ফরহাদ মজহার থ্রেটেন্ড বাই সাইন্স


ফরহাদ মজহার থ্রেটেন্ড বাই সাইন্স। এইটা একটা হুমায়ুন আহমেদের নাটকের নাম হইতে পারতো। কিন্তু এই জীবনে এখন সবই সত্য। মজহার সাহেব তাঁর যুদ্ধটাকে টানতে টানতে বিজ্ঞানের দরজায় নিয়ে গেছেন। কারণ তিনি আলো চান, কিন্তু আলোর উৎস অসহনীয় তাঁর কাছে। তিনি বিজ্ঞানের সুফল চান, কিন্তু বিজ্ঞান মনে যে প্রশ্ন তৈরি করে সেটা ওনার কাছে আপত্তির।  


কিছু কী আসে যায় এটা বিজ্ঞানের সত্য কিনা? ঠিক আছে, বিজ্ঞান থেকে জানলাম, সূর্য হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র। পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ১০৯ গুণ বড়। হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম ভর্তি এক গ্যাসের বিশাল ফুটবল যার তাপমাত্রা প্রায় ৫০০০ ডিগ্রি সে.। এই নক্ষত্রটিকে কেন্দ্র করেই পৃথিবী ২৯.৭৮৩/সে. গতিতে ঘুরছে। জানলাম, এবং মানলামও। অসুবিধা তো নাই। কিন্তু পুরাণ, কল্পনা ও সংকল্পের ভূমিকা আর কোনো কিছু জানার ভূমিকা তো এক নয়।বিজ্ঞান যদি তার নিজের জগতে বিরাজ করে, তাহলে এখানে কোনো দ্বন্দ্ব তৈরির কারণ ঘটে না।  

মজহার সাহেব প্রথমে লেখায় আপনি আগে তথ্য বিভ্রাট দূর করেন। তারপর তথ্য বিষয়ে জ্ঞান দেন। সূর্য পৃথিবীর চাইতে কোন কারণে বড়? আয়তন, ওজন, ব্যাসার্ধ, ... কোনটা ?

কিন্তু বিজ্ঞান যদি বলে, পুরাণ বা মানুষের মিথ বা কল্পনার জগৎ স্রেফ কুসংস্কার, সূর্যের আবার ঘোড়া কী? তার আবার চার সঙ্গিনী কোথা থেকে? তার আবার রথ কিসের? ছাড়ো এসব অবৈজ্ঞানিক চিন্তা; মানুষের প্রগতি মানে মিথ, কল্পনা ও কুসংস্কার থেকে মুক্তি। যদি বিজ্ঞান দাবি করে, আমাদের কল্পনা ও চিন্তাশক্তি বাদ দিয়ে শুধু বিজ্ঞানকেই বিশ্বাস করতে হবে, আর কিছুকে না, তারপর বিজ্ঞান দিন আর রাত্রি কেন হয় তার বৈজ্ঞানিক কারণ ব্যাখ্যা করল। এমন ভাবে ব্যাখ্যা করল যেন আমাদের মাথা ধোলাই হয়ে পারফেক্ট বৈজ্ঞানিক মস্তিষ্কে পরিণত হয়; আমরা চিরকালের জন্য সূর্যের সোনার রথ দেখা ভুলে গেলাম। ভয়ে এসব গল্প কাউকে বলারই আর সাহস পেলাম না। কতো সহজে আমাদের কৈশোর বিজ্ঞানের হাতে নিহত হয়েছে। কতো কিশোর-কিশোরী বিজ্ঞানের নামে শহীদ হচ্ছে প্রতিদিন- কে তার খবর রাখে? তারপর সমাজে যখন এই হতাহতের ঘটনা ভিন্ন এক ব্যাধি হিসেবে ধরা পড়ে, ততদিনে দেরি হয়ে যায়।

মজহার সাহেব হাওয়ায় শত্রু খোঁজা বাদ দেন। উপরের লাইনগুলো দিয়ে কি বুঝাইলেন? কিশোর-কিশোরীদের থেকে বিজ্ঞান কি ছিনিয়ে নেয়? আমার কৈশোর আপনার অনেক পরে আসছে। সেটা নিতান্তই সৌভাগ্যবশত, এবং সে কারণে কৈশোর সম্বন্ধে কিছু বলার এখতিয়ার রাখি। একেবারে বালেগ সময়ে ভাবতাম, বড় একটা চিলের পা ধইরা ঝুলে পড়লে খুব সুন্দর উপর থেকে পৃথিবী দেখা যাবে। এক সময় এই ভুল ভাঙ্গছে। সেটা বিজ্ঞান ভাঙ্গে নাই, সময় এবং উপলদ্ধি। বিজ্ঞান কোন মতবাদ না। বিজ্ঞানে বিশ্বাসের স্থান নাই। বিজ্ঞান তথ্য-উপাত্ত নির্ভর। পৃথিবীতে এখনো অনেক মানুষ আছে, যারা বিশ্বাস করে পৃথিবী চ্যাপ্টা। বিজ্ঞান কিন্তু তাদের জীবন-যাপনের লাইসেন্স কেড়ে নেয় নাই। বিজ্ঞান নিজের গতিতেই চলে, একটা মন্দির খুলে কিন্তু খয়রাত নেয় না প্রচার এবং প্রসারের জন্য। আপনি যদি মনে করেন পৃথিবী একটা বড় কচ্ছপের পিঠে, এবং কচ্ছপটা হাঁটে বলেই পৃথিবী ঘুরে, কেউ কিন্তু আপনার দিকে হামলা করবে না, বিজ্ঞানবাদে বিশ্বাস করেন না বইলা। কারণ বিজ্ঞানবাদ বইলা কোন কিছুর অস্তিত্ব নাই, এবং যেটা নাই সেটার এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য দেশ, রাজনীতি এবং সিলমারা চার্চ নাই। আপনি কখনো শুনবেন না, একটা দেশ যেটার নাম সাইন্টিফিক রিপাবলিক অফ পান্ডুভিয়া।  দয়া করে আমাদের কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের আর বিভ্রান্ত কইরেন না। কারণ আপনার এই লেখাটা সর্ব অর্থেই বিভ্রান্তিকর।



Feb 27, 2015


আপনার বিরুদ্ধে যে কথা বলবে তাকেই যদি মারবেন ঠিক করেন, তবে কঠিন সময় আপনার সামনে। আরো ৬ বিলিয়ন মারতে হবে।


* অভিজিৎ রায়ের হত্যার পর ডেইলি মেইলে প্রকাশিত লেখার একটা কমেন্ট। http://goo.gl/Ej9oem



Jun 11, 2014

আপত্তিকর নিয়ে আপত্তি

"আপত্তিকর" শব্দটাই আমার কাছে এখন অগ্রহণযোগ্য। "প্রেমিক-প্রেমিকা যুগলকে আপত্তিকর অবস্থায় পাওয়া গেছে" এই সংবাদগুলো ক্লীশে এবং বস্তাপঁচা। সমাজ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সবচেয়ে উদাহরণ হিসেবে দলমতনির্বিশেষে লোকজন এই উদাহরণটা টানে। আমাদের সমাজ হচ্ছে রেখেঢেকে রাখা সমাজ। এখানে রেখেঢেকে গণধর্ষণ করা যায়। কিন্তু প্রকাশ্যে আলিঙ্গন করা যায় না।

আপত্তিকর তথ্যসূত্রঃ http://mzamin.com/details.php?mzamin=MjcyMzQ%3D&s=MQ%3D%3D

May 9, 2008

ছোটগল্প

আমি সত্য না হইলে গুরু সত্য কোনকালে। আজ এই কথার সারমর্ম অনুধাবন করলাম। মনে হলো মোঁপাসা'র ছোট গল্প, টান টান কিন্তু সংক্ষিপ্ত। ভাসিয়ে নেওয়ার তীব্র একটা সম্ভাবনা নিয়ে আসা যে ঢেউ, গোড়ালির কাছে সন্তর্পণে মিলিয়ে যায় ঠিক সেরকম একটা অনুভব। বড় উপন্যাস হবার উপাদান ছিলো কিন্তু, গুরু চাইলেন না। আরো সহজভাবে বলতে পারি, মহাকাব্য হবার অমিত সম্ভাবনার অপমৃত্যুই ছোটগল্পের জন্ম দেয়।

Feb 5, 2008

উষ্ণ এই দিনে

প্রথমেই আমার ভাতিজি কে স্বাগতম জানাই এই বসন্ত আগমনী দিনে। পিয়াল এবং পিয়ারী দুজনেই তরতাজা থাকুন, শুভেচ্ছা নবসন্তানতৃত্ব পাওয়া দম্পতিকে।

লাঞ্চ খেতে আজ জাপানীজ রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলাম। হিবাশী রাইস সাথে গ্রিলড টেরিয়াকি চিকেন। সয়া সস একটু কম দিতে বলেছি, তাতে পেট ঠান্ডা থাকে। খাওয়াটা বেশ হয়েছে। অবশ্য খাওয়া ভালো না হলে খবরই ছিলো, কারণ রওয়ানা হবার সময় দেখি ১৫ ডলারের পার্কিং টিকেট খেয়েছি। মেশিন শপের পার্কিং লটে গাড়ী ছিলো। ওটা ফ্যাকাল্টি/স্টাফ পার্কিং । কিন্তু মজা হচ্ছে শুধু দুটো গাড়ীকেই টিকেট দিয়েছে, অন্যদের দেয়নি। সূত্র মারফত জানলাম কেউ একজন স্পেসিফিক্যালি আমার গাড়ীর নম্বর উল্লেখ করে পুলিশে ফোন দিয়েছিলো। মেশিন শপের এক স্টাফ চেষ্টা করেছে কিন্তু টিকিট দেওয়া আটকাতে পারেনি। কে এরকম করতে পারে ? এটাই আমার প্রথম পার্কিং টিকেট। ঈশ্বরের কোন খাস পেয়াদা হবে হয়তো, কিংবা শয়তানের ণওকর। বজ্জাত হাড়গিলে, চিমসে কাঠঠোকরা।

রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে দেখি, আকাশ জুড়ে ধবল মেঘেরা পায়চারি করছে। বাজে ধরণের ঠান্ডা গায়েব, উষ্ণ এবং ওমদায়ক বাতাস। এটা বসন্তের অগ্রগামী সংকেত। ঠিক এই সংকেত চিনতে আমার কখনোই ভুল হয় না। বসন্ত আসতে দেরী আছে, কিন্তু খবর পাঠালো সে আসবে এবং নিশ্চিতভাবেই সে আসবে। গাড়ীটা এবার এনে রেখেছি একটা প্রাইভেট ডর্মের পার্কিং লটে, ওদের ট্যাগ আমার আছে। যেখানে রেখেছি সেখান থেকে একটা গাড়ি টো করে নিয়ে গেলো ক্ষণিক আগে। পিছনে হুড়কো লাগিয়ে, রাস্তায় নাক দিয়ে খত দিতে দিতে। কি বিষণ্ণ এবং বেদনাদায়ক সব নৈমত্তিক ঘটনা ঘটে চলেছে, অসাধারণ বসন্তবার্তার দিনে। একটা দিন হুট করে কখনো থেমে যায়না, বসন্ত অনলে। বড়ই অদ্ভুত জীবনাচরণ।

Sep 15, 2007

টোয়েন্টি-টোয়েন্টি



টোয়েন্টি-টোয়েন্টি খেলা দেখিনি এখনো। তবে বুঝতে পারছি খেলাটা জনপ্রিয় হতে যাচ্ছে। ক্রিকেট বিনোদনের আবেদন বিশ্বব্যপী করবার জন্য যা করা দরকার সেটাই করছে কর্তাব্যক্তিরা। ওভার কমানো, মাঠ ছোট সাইজ করা, আরো নানাবিধ; ভবিষ্যতে চিয়ার লিডার'রা এসে হাফটাইমে কোমর দুলুনী দিলেও খুব একটা অবাক হবো না। গতপরশু ভারত-পাকিস্তান খেলায় যেটা দেখলাম, সেটা আমাকে ভাবালো। খেলা টাই হবার পর 'বোল আউট' নামক একটা উর্বর সমাধান। নিশ্চিত ভাবেই আইসিসি'র কর্মকর্তারা ফুটবল বাদে অন্য কোন খেলা দেখেন না, সেটা বোল আউট পদ্ধতি দেখলেই বোঝা যায়। জমজমাট একটা ম্যাচের নির্বোধ এবং প্রাণহীন সমাধান হতে পারে 'বোল আউট'। আমার বিশ্বাস বাংলাদেশের আনাচে-কানাচের কিশোর ক্রিকেটার'রা 'বোল আউটে'র চেয়েও দর্শনীয় এবং দক্ষতাপূর্ণ একটা সমাধান দিতে পারবে। যেটা পারেনি আইসিসি'র মাথামোটা মার্কেটিং এক্সপার্টরা। শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। খেলা'র পণ্যমূল্য বাড়াতে গিয়ে, যেন বিনোদন মূল্য হারিয়ে না যায় সেদিকে তারা লক্ষ্য রাখবেন আশা করি।

Aug 29, 2007

আমাদের রোমযাত্রা কি তবে শুরু হলো ?

সব রাস্তাই ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে এক পর্যায়ে রোম অভিমুখী হয়। কথাটা নিদারূণ সত্য বলে মনে হচ্ছে, সম সাময়িক ঘটনাপ্রবাহে। নাশকতামূলক ষড়যন্ত্র, অপশক্তি, দূরভিসন্ধি নানাবিধ অভিধা এখন সেনাপ্রধান এবং উপদেষ্টাদের কথায়। আগের সরকারগুলোর অভিযোগের ক্ষেত্রে দেখেছি, সরকারীদল খুব প্রত্যাশিতভাবেই বিরোধীদলকে দায়ী করে থাকে নাশকতামূলক কাজে লিপ্ত বলে। একই সাথে প্রধানদুটি দলের সাথে দুটো প্রতিবেশী দেশের ইন্ধন'ও উঠে আসে সরকারী প্রেসনোটে। এসব নাশকতা ছিলো বিরোধী দলের ছাত্রনেতা কিম্বা কোন নেতাকে ঢিট করবার প্রয়োজনীয় হাতিয়ার। বর্তমানে দৃশ্য পুরোপুরি বদলে গেছে। যুগে যুগে সারা পৃথিবীতেই সেনাসরকার রাজনীতি বিরোধী। এখন রাজনীতিবিদ কিম্বা রাজনীতি যেটাই বলুন, রাজনৈতিক আবহকেই অপশক্তি বলে চিত্রায়িত করবার চেষ্টা করছে বর্তমান সরকার* (*সেনাসমর্থিত সরকার)।

সরকার বলছে, অপশক্তি চাইছে জনগণের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে দাঁড়া করাতে এবং প্রেসব্রিফিংয়ে বলছে রাজনীতিবিদরাই হচ্ছে এই অপশক্তি। তাহলে বিষয়টা কোথায় দাঁড়ায়। সরকার রাজনীতিকে জনগণের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। ডানে-বামে কান্নি মেরে রাস্তা আবার ঠিক রোমে পৌঁছোচ্ছে। জেনারেল পারভেজ মোশাররফ ক্ষমতায় আসবার পর পাকিস্তানের ব্যাংকগুলোতে ঋণখেলাপীরা লাইনে দাঁড়িয়ে হুড়োহুড়ি করে ঋণ শোধ করেছিলো। নেওয়াজ শরীফ আজীবন নির্বাসিত হলেন, এবং বেনজীর ভুট্টো দূর্নীতির দায়ে ওয়ারেন্ট এড়াতে প্রবাসী। আমাদের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের নেত্রীও, ঠিক এমন দশা হওয়ার মুখে ছিলেন। এখানে লক্ষ্যনীয় যে, পুরো রাজনৈতিক হিসেব-নিকেশ কে একপাশে রেখে দুজন স্কেপগোট তৈরির প্রথা, দু-দেশেই সমানভাবে বিরাজমান। তার মানে কী ? অন্য রাজনীতিবিদ যারা জেলের বাইরে আছেন, যারা সংস্কারের কথা বলছেন তারা অপরাধ করেননি ?


অপশক্তি'র প্রশ্নে আবার আসি। অপশক্তি কে বা কারা ? সংবাদ মাধ্যমের ভাষ্য অনুযায়ী এই পৌনে এক লক্ষ লোক অপশক্তি । এরমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমবেশী সব ছাত্র-ছাত্রীই অপশক্তি, কারণ বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল ঢাবি থেকে। একটা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১০০ জনে ১ জন, কিম্বা ১০ জনে ১ জন ভিন্নমত পোষন করলে সেটাকে আমরা ভিন্নমত বলতে পারি। সরকার পক্ষ বলবে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী কিম্বা অপশক্তি। কিন্তু দেশের প্রতীক একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমস্ত ছাত্র-ছাত্রী-শিক্ষক-অভিভাবক এবং দেশের অসংখ্য মানুষ যখন একই মত পোষন করে; তখন সেটা সরকারে পছন্দনীয় না হতে পারে কিন্তু সেটা একটা মত এবং সেটাই দেশের প্রতিনিধিত্বকারী মত।